সদ্যবিদায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ২ লাখ ১৬ হাজার মানুষ চাকরি পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এ কারণে অর্থনীতিবিদরা প্রত্যাশা করছেন যে, দেশটির অর্থনীতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে। অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ার পরিবর্তে তারা টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছেন। রোববার (৭ জানুয়ারি) নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডিপার্টমেন্ট সম্প্রতি জানিয়েছে, বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও গত কয়েক মাসে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভাটা পড়েছে। ছাঁটাইয়ের হার কমেছে। নতুন কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি পুরনো কর্মীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। যাকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ গত কয়েক বছরে যে আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়িয়েছে তার ফল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা একই সঙ্গে সতর্ক করেছেন যে লক্ষ্য অর্জন হয়েছে কিনা তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। সামগ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর উচ্চ সুদের হারের প্রভাব পুরোপুরি পড়তে আরো সময় লাগবে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, কর্মী শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাওয়ার্কের চিফ ইকোনমিস্ট ড্যানিয়েল ওয়াল্টম্যান বলেন, ‘শ্রম বাজারের সত্যিকারের পরীক্ষা এখন শুরু হলো। আর এ পরীক্ষায় পাস করা অনেক কঠিন।’
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে পরস্পর বিপরীত কথাবার্তা বলেছেন। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ সতর্ক করেছেন, ফেডারেল রিজার্ভ যে সুদহার বাড়িয়েছে, এতে দেশটির অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়বে। একটি জরিপে অংশ নেয়া ৯০ শতাংশ চিফ এক্সিকিউটিভ বলেছিলেন, দেশটির অর্থনীতি পেছন দিকে হাঁটছে। কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিশ্লেষক পূর্বাভাস করেছিলেন যে যদি বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভোক্তা ব্যয় ওইসব দৃষ্টিভঙ্গি ভুল প্রমাণ করেছে। ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছিল। বেকারত্ব যখন বেশি ছিল তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ৩ শতাংশ।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ২৭ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, যা ২০২১-২২ সালের চেয়ে কিছুটা বেশি। তবে ২০১০ সালের চেয়ে এটা অনেক বেশি। নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে ২০০০ সালের পর পঞ্চম শক্তিশালী বছর হচ্ছে ২০২৩ সাল। অর্থনীতিবিদরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সম্ভবত একটি উড়োজাহাজ যেমন উড্ডয়ন বা অবতরণের সময় ঝাঁকুনি দেয়, তেমন দ্রুত গতিতে চলাচল করছে।
স্বাস্থ্য, সামাজিক সহায়তামূলক কাজ, স্থানীয় সরকার বা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সেবা খাতে ডিসেম্বরে কর্মসংস্থান বেড়েছে। আগে পরিবহন ও গুদাম খাতে কর্ম বৃদ্ধি ঘটলেও এসব খাতে ডিসেম্বরে অনেকে কাজ হারিয়েছে।
ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সার্বিক শ্রম খাত (যারা কাজ করছেন অথবা চাকরি খুঁজছেন) প্রায় সাত লাখে সংকুচিত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের জন্য অপ্রত্যাশিত। অক্টোবর ও নভেম্বরের সংশোধিত তথ্যে (মাসিক ভিত্তিতে) যা ছিল ৭১ হাজার। ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে মাসে গড়ে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার, যা তৃতীয় প্রান্তিকের ২ লাখ ২১ হাজার ও দ্বিতীয় প্রান্তিকের ২ লাখ ১ হাজারের চেয়ে কম।
/ ঢাকা বিজনেস/