সুন্দরবনের নদনদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরনের কাঁকড়া আহরণ দুই মাস নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরো সুন্দরবনে এই নিষেধাজ্ঞার বলবৎ থাকবে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি; এই দুই মাস সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রপ্তানি পণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন মওসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া জন্ম নেয়। মা কাঁকড়া রক্ষার জন্যই প্রতি বছরের এ সময়ে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ।
এদিকে কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকা থেকে কয়েক কোটি টাকার বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়া রপ্তানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। বিদেশে রপ্তানি করা কাঁকড়ার ৯৯ শতাংশ সুন্দরবন থেকে আহরণ করা হয়ে থাকে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে কাঁকড়া রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ এ সময় বেকার হয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে কাঁকড়া রপ্তানিতে আয় দাঁড়ায় ১৪৬ মিলিয়ন ডলারে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এর আয় পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেড়ে য়ায়। কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার সুন্দরবন।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কাঁকড়া জেলে নিমাই চন্দ্র বালা বলেন, ‘আমার প্রধান পেশা সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া ধরা। বছরের এই দুই মাস আমি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করি। দুই মাসের জন্য অন্য পেশায়ও যুক্ত হতে পারি না।’
বছরে দুইমাস বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়ে মোংলার জয়মনি এলাকার কাঁকড়া জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীকে প্রণোদনা দেয়। কিন্তু আমাদের জন্য কিছু নাই।’
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ‘কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মুখে বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাকড়া গভীর সাগরের দিকে ছোটে। তাছাড়া এই সময় নদীর পানি থেকে সাগরের পানি গরম এবং নদীর পানির থেকে সাগরের পানির লবণাক্ততা বেশি থাকে। এসব কারণেও নদী-খাল থেকে কাঁকড়া সাগরে ছুটে যায়। কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের ধরতে না পারে, সেজন্য কাঁকড়ার অভায়ারণ্য সুন্দরনে মা কাঁকড়া রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন ব্যিভাগ। এছাড়া মা কাঁকড়ার যখন ডিম হয়, তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। তারা ক্ষুধার্থ থাকে। তাদের সামনে যে খাবার দেওয়া হয় তারা দ্রুত তা খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। এরফলে প্রজনন মৌমুমে খুব সহজেই জেলেরা কাঁকড়া শিকার করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি এই সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয় তাহলে পরবর্তী বছরে অধিক হারে কাঁকড়া উৎপাদন ও বিদেশে অধিক পরিমাণ রপ্তানি করা সম্ভব হয়।’
পূর্ব-সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বলেন, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি; এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজননের মৌসুম। তাই এই সময় কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। আর এই নিষিদ্ধ বলবৎ থাকে শুধু সুন্দরবন এলাকায়। তাই সুন্দরবন বিভাগ এটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ঢাকা বিজনেস/এনই/