বছরের অন্যান্য সময় চুল পড়লেও শীতের সময়ে তার পরিমাণ বেড়ে যায়। মূলত এই সময়ের আবহাওয়া রুক্ষ থাকে। ফলে বাতাসে বাড়ে শুষ্কতার পরিমাণ। যার প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকে, বাদ যায় না চুলও।
শীতের সময়ে যদি আপনার চুল পড়ার পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। এই সময় কেমিক্যালযুক্ত উপকরণ ব্যবহার না করে বেছে নিতে পারেন ঘরোয়া উপায়। স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনে চুল পড়া বন্ধে বেশ কিছু খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ জার্লিন জোন্স। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সেই খাবারগুলোর বিষয়ে-
১. ডিম
ডিম প্রোটিন এবং বায়োটিনের একটি দুর্দান্ত উত্স। এই দুটি পুষ্টি চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। চুলের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চুলের ফলিকল বেশিরভাগ প্রোটিন দিয়ে তৈরি। গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়েটে প্রোটিনের অভাব থাকলে চুল পড়া বেড়ে যায়। কেরাটিন নামক চুলের প্রোটিন তৈরির জন্য বায়োটিন অপরিহার্য, এই কারণেই বায়োটিন সম্পূরকগুলো প্রায়শই চুলের বৃদ্ধির জন্য বাজারজাত করা হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যাদের বায়োটিনের ঘাটতি রয়েছে, তাদের বেশি বায়োটিন গ্রহণ করার পর চুল আগের তুলনায় দ্রুত বেড়েছে।
২. চর্বিযুক্ত মাছ
স্যামন, হেরিং এবং ম্যাকেরেলের মতো চর্বিযুক্ত মাছেও বেশ পুষ্টি রয়েছে যা চুলের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এগুলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের দুর্দান্ত উত্স। ১২০ জন নারীর ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং সেইসঙ্গে এন্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ একটি সম্পূরক খেলে চুল পড়া কমে যায় এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, চর্বিযুক্ত মাছ প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি৩ এবং বি ভিটামিনের একটি দুর্দান্ত উত্স, পুষ্টি উপাদান যা শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর চুলকে বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। মজার বিষয় হল, গবেষণায় ভিটামিন ডি৩ এর অভাবকে চুল পড়ার সাথে যুক্ত করেছে। যদিও এটি এখনও অস্পষ্ট যে কম ভিটামিন ডি চুলের ক্ষতির করে, তবে পুষ্টিবিদ বলছেন, আপনার খাবারে নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ এবং ভিটামিন ডি-এর অন্যান্য উত্স রাখলে চুল পড়া কমতে পারে।
৩. পালং শাক
সব শাকই শরীরের জন্য কম-বেশি উপকারী। তবে পালং শাকে থাকে প্রচুর ফোলেট, ভিটামিন এ এবং সি। এই উপকারী উপাদানগুলো চুল পড়া রোধ করতে দারুণ কার্যকরী। তাই পুষ্টিবিদের মতে, নিয়মিত খাবারের তালিকায় পালং শাক থাকলে তা চুল পড়ার পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
৪. মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু বিটা-ক্যারোটিনের একটি বড় উৎস। শরীর এই যৌগটিকে ভিটামিন এ-তে রূপান্তর করে, যা চুলের স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে একটি মাঝারি মিষ্টি আলুতে (প্রায় ১১৪ গ্রাম) পর্যাপ্ত বিটা ক্যারোটিন থাকে যা আপনার দৈনিক ভিটামিন এ’র চাহিদার ১৬০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারে। আর ভিটামিন এ সিবামের উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে, যা চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে অত্যধিক ভিটামিন এ চুল পড়ার কারণও হতে পারে।
৫. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলির একটি দুর্দান্ত উত্স। এগুলো ভিটামিন-ই এর একটি অন্যতম উত্স, যা চুল বাড়াতে সাহায্য করে। একটি মাঝারি অ্যাভোকাডো (প্রায় ২০০ গ্রাম) আপনার দৈনিক ভিটামিন-ই চাহিদার ২৮ শতাংশ পূরণ করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চুল পড়ে যাওয়া লোকেরা ৮ মাস ধরে ভিটামিন-ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার পর তাদের চুলের বৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৩৪ শতাংশের বেশি।
এছাড়াও ভিটামিন-ই এক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতি থেকে ত্বকের অংশগুলো যেমন মাথার ত্বককে রক্ষা করে। মাথার ত্বকে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের ফলে চুলের গুণমান খারাপ হতে পারে এবং চুলের ফলিকল কম হতে পারে।
৬. বাদাম
চুল পড়া রোধে অন্যতম ভূমিকা পালন করে বাদাম। বাদামে রয়েছে চুল বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক আউন্স (২৮ গ্রাম) বাদাম আপনার দৈনিক ভিটামিন-ই চাহিদার ৪৮ শতাংশ পূরণ করে। এছাড়াও এতে আছে ভিটামিন বি, জিঙ্ক এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো উপাদান। এই পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে যেকোনো একটির ঘাটতি চুল পড়তে সাহায্য করে। তাই বাদাম খেলে যখন এই উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় তখন চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা বিজনেস/এমএ/