ঢাকা বিজনেস ডেস্ক ||
২৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:০১ পিএম
চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই সহজ নয়। তা ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পেশাগত এবং সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজকাল এমন একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে কর্মীরা তাদের কর্মস্থল ছেড়ে নতুন সুযোগ খুঁজতে চলেছেন। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত? চাকরি ছাড়ার পেছনে আসল কারণ কী? এ বিষয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করা হলে কিছু বিশেষ কারণ উঠে আসে।
বেতনবৈষম্য ও অনিয়মিত বেতন
যতটা আমরা কাজের চাপ এবং পরিশ্রমের কথা বলি, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্থিক কারণ। কর্মীরা যখন মনে করেন যে, তাদের পরিশ্রমের সঙ্গে বেতন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নিয়মিত বেতন হয় না। এমন অবস্থায় তারা চাকরি ছাড়ার জন্য ভাবতে শুরু করেন। বেতন কাঠামো, বোনাস, এবং অন্যান্য সুবিধা কখনো কখনো একটি কর্মীকে হতাশ করে তোলে।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যখন কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত উন্নতি বা আর্নিং পোটেনশিয়াল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়, তখন কর্মীরা অন্য কোম্পানিতে চাকরি খোঁজেন যেখানে তাদের কাজের জন্য সঠিক মূল্য প্রদান করা হয়।
নেতৃত্বের অভাব
কর্মীরা তাদের সুপারভাইজারদের কাছ থেকে যথাযথ নির্দেশনা এবং সহায়তা না পেলে, তাদের মনোবল ভেঙে যায়। সঠিক নেতৃত্ব এবং সহায়তা পেলে কর্মী আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারেন এবং তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। কিন্তু যখন নেতৃত্ব দুর্বল হয়, তখন কর্মীরা হতাশ হয়ে কাজ ছাড়তে চান।
গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ৩০ শতাংশ কর্মী তাদের সুপারভাইজারের অনুপস্থিতি এবং নেতিবাচক মনোভাবের কারণে চাকরি ছাড়েন। একজন কর্মীর মূল্যায়ন, প্রশংসা এবং সহায়তা না পেলে তার ইচ্ছাশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত চাপ
বিশ্বব্যাপী অনেক কর্মী অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে তাদের চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। "ওভারটাইম" বা অতিরিক্ত সময় কাজ করা, অফিসের চাপ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষতি, কর্মীদের মধ্যে মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তির সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল কর্মীরা সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করেন, তারা প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এমন পরিস্থিতিতে, কর্মীরা নিজের জীবন এবং পরিবারের জন্য সময় না পেয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকেন। যে কোনো কাজের ফলস্বরূপ যদি আপনার শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে, তবে চাকরি ছাড়াই তার সমাধান খুঁজতে হয়।
আত্মবিশ্বাসের অভাব
প্রথমেই আসা যাক কর্মী-মানসিকতার দিকে। যখন একটি কর্মী মনে করেন যে তার কাজের প্রতি আগ্রহ এবং আত্মবিশ্বাস কমে গেছে, তখন সে সাধারণত চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কর্মসংস্থান সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, কর্মীদের ৪৫ শতাংশই বলেন যে, তারা দীর্ঘ সময় ধরে একঘেয়েমি অনুভব করেন এবং এতে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়।
আরেকটি ব্যাপার হলো, যদি কর্মীর পেশাগত উন্নতির কোনও সম্ভাবনা না থাকে, তবে তা তাদের কাছে হতাশাজনক মনে হয়। কর্মক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং শিক্ষা নিশ্চিত না হলে কর্মীরা মন থেকে প্রস্থান করেন।
সমাধান কী
কর্মীদের চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত তাদের জীবনের একটি বড় বাঁক ও এটি কোনো একক কারণে হয় না। প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ যদি কর্মীরা একসাথে চাকরি ছেড়ে দেন, তবে তা প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনশীলতা এবং মানসিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কর্মসংস্থানে উত্তম নেতৃত্ব, কর্মীদের জন্য উন্নয়নমূলক সুযোগ, কাজের চাপের সঠিক ভারসাম্য, এবং আর্থিক সুবিধা সঠিকভাবে প্রদান করা, এসবই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। কর্মীদের যদি তাদের কাজের মূল্যায়ন এবং সহায়তা প্রদান করা যায়, তবে তারা প্রতিষ্ঠান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না, বরং সৃজনশীলভাবে তাদের কর্মজীবন আরও সমৃদ্ধ করতে চাইবেন।
এই সব কিছুই প্রতিষ্ঠানের এবং কর্মীদের উভয়ের জন্য একটি সুবিধা বয়ে আনবে।
শেয়ার করুন