২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

বাংলা একাডেমি পুরস্কার কার পাওয়া উচিত

কমল ঠাকুর || ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৪:১২ পিএম
বাংলা একাডেমি পুরস্কার কার পাওয়া উচিত


নোবেল পুরস্কার, ম্যানবুকার পুরস্কার থেকে শুরু করে দেশের বাংলা একাডেমি পুরস্কার, কোনোটাই প্রকৃতপক্ষে লেখালেখির স্বীকৃতি নয় বলে মনে করেন বিদ্বজ্জনরা। তাদের মতে, পুরস্কার মূলত কোনো সংঘ-রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠান-গোষ্ঠী-সংগঠন বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে লেখককে সম্মান জানানো ও ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপই দেওয়া হয়। তারা এও বলছেন, পুরস্কার যদি  সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হয়, তাহলে যারা পুরস্কার পাননি, তাদের লেখার মান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কথা। বাস্তবে তা হয় না। বরং পুরস্কারপ্রাপ্তদের কারও কারও সাহিত্যকর্মের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যুগে যুগে।  পুরস্কার সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি নয় জেনেও বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক পুরস্কার ঘোষণার সময় এলে সাহিত্যাঙ্গনে-বোদ্ধামহলে সম্ভাব্য পুরস্কারজয়ীদের নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে যায়।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই সাহিত্যের বোদ্ধামহলে পুরস্কার কে পেতে পারেন, কার পাওয়া উচিত, এসব বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।  বাংলা একাডেমিক গত কয়েক বছর যাবত কবিতা, কথাসাহিত্য, গবেষণা/প্রবন্ধ, অনুবাদ, নাটক, শিশু সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, বিজ্ঞান/কল্পনাবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞান, ভ্রমণ কাহিনি ও ফোকলোর; এই দশ শাখায় পুরস্কার দিয়ে আসছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, বাংলা একাডেমি দশ শাখার সব শাখা নিয়ে সাহিত্য মহলে তেমন আলোচনা-সমালোচনা চলে না, যতটা জল্পনা-কল্পনা চলে কবিতা, কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধ/গবেষণা শাখা নিয়ে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলে কবিতা নিয়ে। এবারও বোদ্ধামহলে আলোচনা চলছে কে পেতে পারেন কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সেই বিষয় নিয়ে। একইসঙ্গে কেউ কেউ বলছেন, কে পেতে পারে, এই প্রশ্নের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কার পাওয়া উচিত, এই জিজ্ঞাসা। শেষোক্তজনরা বলছেন, এবার কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিটি হচ্ছেন  ময়ুখ চৌধুরী।  

ময়ুখ চৌধুরীর প্রকৃত নাম আনোয়ারুল আজিম। তিনি  ১৯৫০ সালের  ২২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন।  ময়ুখ চৌধুরীর এযাবৎ দশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কালো বরফের প্রতিবেশী’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে।   দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘অর্ধেক রয়েছি জলে, অর্ধেক জালে’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে। আর সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘চরণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুণ্ডুহীন’ প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে।     তার কাব্যগ্রন্থগুলো হলো:  কালো বরফের প্রতিবেশী; অর্ধেক রয়েছি জলে, অর্ধেক জালে; তোমার জানলায় আমি জেগে আছি চন্দ্রমল্লিকা; প্যারিসের নীলরুটি; আমার আসতে একটু দেরি হতে পারে; পলাতক পেণ্ডুলাম;  ক্যাঙ্গারুর বুকপকেট;  পিরামিড সংসার; জারুলতলার কাব্য ও চরণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুণ্ডুহীন। এছাড়া  ‘ডান হাতের পাঁচটি আঙুল’ নামে একটি কাব্যসংকলনও প্রকাশিত হয়েছে।  সাহিত্যকর্মের জন্য  পেয়েছেন ২০১৫ সালে  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রদত্ত একুশে সাহিত্য পুরস্কার; একই বছর  পেয়েছেন  আবদুল করিম খান স্মৃতি পুরস্কার। এছাড়া পেয়েছেন অরণি সাহিত্য পুরস্কার। 

ময়ুখ চৌধুরী প্রকরণ সচেতন। কবিতার বিশুদ্ধতায় বিশ্বাসী ও নিমগ্ন সাধক। তার কবিতার বিষয় হিসেবে মানব-মানবীর প্রেম-বিরহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, দেশপ্রেম, সমাজ-রাষ্ট্র থেকে শুরু করে প্রকৃতি-নিসর্গ, ধর্ম-দর্শনও।  তার কবিতায় প্রকৃতি, প্রেম, জীবন-জগতের নানামুখী প্রশ্ন, বৈজ্ঞানিক কৌতূহল, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মৃত্যু বিষয়ক ভাবনা উঠে এসেছে। যার বিষয়ের এই প্রকরণগত বৈচিত্র্যের পাশাপাশি ময়ুখ চৌধুরীর কবিতার নান্দনিক সৌন্দর্যও সুস্পষ্ট। তিনি কবিতাকে করে তুলেছেন শিল্পের তুরীয় মার্গের বিষয়। ফলে বোদ্ধামহলের মতে, এবার ময়ুখ চৌধুরীরই বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া উচিত। 

ময়ুখ চৌধুরীর পর যার নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি মাহমুদ কামাল। তার প্রকৃত নাম  আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনি ১৯৫৭ সালের ২৩ অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলার আকুর টাকুর এলাকায়  জন্মগ্রহণ করেন।  তার প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে,   পরকীয়া;  কবিতার মত কিছু কথা;  শব্দেরা কখনো মানতে চায় না ছন্দাছন্দ;  স্বপ্নের রাজকন্যা; বিরামচিহ্ন; দ্বিতীয় জীবন;  বিকেলের সকল চড়ুই;  বালক বয়সে; মেঘেরা কোথায় যায়; মুহূর্তের কবিতা; কাব্যসমগ্র;  বাকিটুকু অদ্ভুত আঁধার; মুখোশের ভেতরে মুখোশ; নির্বাচিত কবিতা; বদলে যায় পথের প্রকৃতি; আসে যায় মাঝখানে সামান্য সময়; যাবো না তবু যাই।  ইতোপূর্বে পেয়েছেন  চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার; বাংলাদেশ পরিষদ পুরস্কার; শহীদ বুদ্ধিজীবী পদক ; মানবিক চেতনা পরিষদ পদক; আধুনিক কবি সংঘ সম্মাননা; নাট্যম সম্মাননা ; বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার ; নবকল্লোল সাহিত্য ফাউন্ডেশন পদক; কবিতা বাংলা পুরস্কার; ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সম্মাননা ; রাইটার্স ফাউন্ডেশন সম্মাননা ;  জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা, রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার; কবি আলোক সরকার স্মৃতি সম্মাননা; কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্মারক সম্মাননাসহ অনেক  পুরস্কার। 

মাহমুদ কামালের কবিতা সম্পর্কে সদ্য প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাঙালি সারস্বত সমাজের কাছে তিনি কবি, একেবারে চুল থেকে নখ পর্যন্ত। কবিতার গড়ন তিনি অটুট রাখেন, মেজাজটা লিরিকধর্মী। ইশারায় আভাসে তার সিদ্ধি ও সাফল্য ঈর্ষণীয়।’ আর কবি আশিস সান্যাল মনে করেন, ‘শব্দ, ছন্দ এবং চিত্রকল্প রচনায় তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সবচেয়ে ভালো লাগে তার কাব্যভাষা। তিনি একটি নিজস্ব কাব্যভাষা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।’ ফলে বোদ্ধামহলের মতে এবার কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া উচিত মাহমুদ কামালের। 

বোদ্ধাজনদের  মতে, বাংলা  একাডেমি ময়ুখ চৌধুরী ও মাহমুদ কামালকে পুরস্কার দিলে একাডেমিই সম্মানিত হবে।  পুরস্কারপ্রাপ্তিতে ময়ুখ চৌধুরী কিংবা মাহমুদ কামালের  সৃষ্টিশীলতায় যেমন প্রভাব পড়বে না, তেমনি তাদের পরিচিতিও বাড়বে না। 

কবিতার পর যে শাখা নিয়ে সাহিত্যের বোদ্ধামহলে সবচেয়ে বেশি জল্পনা-কল্পনা চলে, সেটি প্রবন্ধ/ গবেষণা শাখা। এই শাখায় যেহেতু প্রবন্ধ ও গবেষণাকে একই ক্যাটাগরি বিবেচনা করা হয়েছে, সেহেতু যারা অ্যাকাডেমিক গবেষণায় রত এবং প্রবন্ধচর্চা করেন, তাদেরই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে মনে করে বোদ্ধা মহল। সেই হিসেবে তারা মনে করছেন, এবার প্রবন্ধ/ গবেষণায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রথম অধিকারী অনীক মাহমুদ।

বোদ্ধামহল বলছে, সমকালীন বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের ধারায় অনীক মাহমুদ একটি ঋদ্ধ কণ্ঠস্বর। তাঁর জন্ম  ১৯৫৮ সালের ২১  নভেম্বর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মচমইল গ্রামে। তার পিতার নাম খন্দকার মজিবর রহমান এবং মাতার নাম মানজা বেগম।  তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮১ সালের বাংলা অনার্স এবং ১৯৮২ সালের এম.এ. পাস করেন। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত তাঁর এম.ফিল. অভিসন্দর্ভ ‘বাংলা কথাসাহিত্যে শওকত ওসমান’।  পিএইচ.ডি. অভিসন্দর্ভ ছিল ‘আধুনিক বাংলা কাব্যে সাম্যবাদী চেতনা’ (১৯৯৫)। এছাড়া তাঁর এই প্রবন্ধের বইগুলো ৫ খণ্ডে সংগ্রহ আকারেও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘জসীম উদ্‌দীনের কাব্যে বিষয়বৈচিত্র্য ও শিল্পরূপ’; ‘আধুনিক সাহিত্য : পরিপ্রেক্ষিত ও প্রতিকৃতি’; ‘সাহিত্যে সাম্যবাদ  থেকে মুক্তিযুদ্ধ’; ‘রবীন্দ্র-ছোটগল্পে জীবনবোধ ও চরিত্রচিত্রণ’; ‘চিরায়ত বাংলা : ভাষা-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সাহিত্য’; ‘সাহিত্য-সংস্কৃতির রূপ-রূপান্তর’; ‘বাংলার গণজীবন ও যুগবোধের সাহিত্য’; ‘বাংলা উপন্যাসে চিত্তবৈভব : ফিরে দেখা’; ‘রবীন্দ্রনাথ : ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’; ‘সিদ্ধির শিখর: কবির অভিযাত্রা’;  ‘চেতনার রঙ মননের রেখা’ প্রভৃতি।  অনীক মাহমুদ প্রবন্ধ-গবেষণায় গভীর মনস্বীতার, মৌলিকত্ব ও বৈচিত্রের পরিচয় দিয়েছেন। ইতোপূর্বে প্রবন্ধের জন্য পেয়েছেন,  ‘চিন্তাসূত্র পুরস্কার’, ‘স্পন্দন সংসদ পুরস্কার’, ‘বাংলাদেশ পাবলিক লাইব্রেরি বিভাগীয় পুরস্কার’, ‘ড. আসাদুজ্জামান সাহিত্য পুরস্কার’, ‘কবিকুঞ্চ পদক’, ‘কবি-সভা রংপুর সম্মাননা’। এই কারণে বোদ্ধামহলের অভিমত, এবার গবেষণা-প্রবন্ধে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার প্রধান অধিকারী অনীক মাহমুদ। 

অনীক মাহমুদের পর যাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, তিনি মহীবুল আজিজ। তিনি ১৯৬২ সালের  ১৯ এপ্রিল যশোরের নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন।  গল্প-উপন্যাস-কাব্য-প্রবন্ধ-গবেষণা মিলিয়ে তাঁর বইয়ের সংখ্যা চল্লিশেরও বেশি। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলে হলো: ‘সৃজনশীলতার সংকট ও অন্যান্য বিবেচনা’, ‘অস্তিত্বের সমস্যা এবং লেখালেখি’ ‘উপনিবেশ-বিরোধিতার সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’, ‘ হাসান আজিজুল হক : রাঢ়বঙ্গের উত্তরাধিকার’, ‘বাংলাদেশের উপন্যাসে গ্রামীণ নিম্নবর্গ’ ‘বিশ্বভাবনা ও অনন্যা’।  তাঁর প্রবন্ধ-গবেষণাগ্রন্থে যেমন মৌলিকত্ব, মনীষা ও গভীর প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে, তেমনি রয়েছে জ্ঞান-অভিজ্ঞতা ও সমাজবীক্ষার নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও। সাহিত্যকর্মের জন্য ইতোপূর্বে পেয়েছেন চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার, বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কার, সোমেন চন্দ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার। সাহিত্যের বোদ্ধামহল মনে করছে, এবার অ্যাকাডেমিক গুরুত্ব, গবেষণার গভীরতা, বৈচিত্র্য ও মৌলিকত্ব বিবেচনা করলে  মহীবুল আজিজ গবেষণা-প্রবন্ধ শাখায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার হকদার। 

কবিতা-প্রবন্ধের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে কথাসাহিত্য। এই শাখায় দুজন কথাশিল্পীকেই বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য হকদার বলে মনে করছেন সাহিত্য সমালোচক ও বোদ্ধামহল। এই দুজন হলেন  আকিমুন রহমান ও মনিরা কায়েস।

এরমধ্যে আকিমুর রহমানের নাম সবার আগে উচ্চারিত হচ্ছে। বোদ্ধাশ্রেণীর মতে এবার কথাসাহিত্যে আকিমুন রহমানই বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্তদের একজন। পেশায় শিক্ষক আকিমুন রহমান জন্মগ্রহণ করেছেন ১৪ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে, নারায়ণগঞ্জে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সম্পন্ন করেছেন স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি।  তাঁর উল্লেখযোগ্য কথাসাহিত্যগ্রন্থগুলো হলো:  ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’, ‘এইসব নিভৃত কুহক’, ‘বিবি থেকে বেগম’, ‘একদিন একটি বুনোপ্রেম ফুটেছিল’, ‘রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি’। তিনি গল্প উপন্যাসে যেমন নিজস্ব ভাষা ও স্বর তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন, তেমনি তাঁর রয়েছে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিও। সাহিত্য কর্মের জন্য ইতোপূর্বে পেয়েছেন বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুরস্কার। বোদ্ধাজনদের মতে, কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবার তাঁরই পাওয়া উচিত।

এরপরই রয়েছেন মনিরা কায়েস।  তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থগুলো হলো:  ‘মাটি পুরাণ পালা’,   ‘কথামনুষ্যপুরাণ’, ‘ধুলোমাটির জন্মসূত্রে’, ‘সত্যি ভূতের গল্প’, ‘জলডাঙার বায়োস্কোপ’।   মনিরা কায়েস তাঁর একেকটি গল্পে অনেক গল্পের বীজ বপন করে দেন। তাঁর গল্পে মানবসমাজ, রাষ্ট্র, গ্রামীণ পটভূমি, নারীর যন্ত্রণা, মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রাম, দেশপ্রেম চিত্রিত হয়েছি বিপুল নৈপুণ্যের সঙ্গে। তিনি জীবনকে এঁকেছেন আপন অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে। তাঁর গল্প সমকালীন ও পূর্ববর্তী গল্পকারদের ভাষা ও বিষয়, কাহিনি ও ঘটনা বিনির্মাণে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। ফলে এবার কথা সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার অধিকারী তিনিও।

কবিতা-কথাসাহিত্য-প্রবন্ধের বাইরে বাকি শাখাগুলে নিয়ে বোদ্ধামহলে তেমন আলোড়ন না থাকলেও স্ব-স্ব ক্ষেত্রের লেখকের শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে আলোচনা-জল্পনা-কল্পনা কিন্তু থেমে নেই। তারা কবিতা, কথা সাহিত্য, প্রবন্ধ/গবেষণা, অনুবাদ, নাটক, শিশু সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, বিজ্ঞান/কল্পনাবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞান, ভ্রমণ কাহিনি ও ফোকলোর শাখার জন্য নিজ নিজ পছন্দের ব্যক্তিদেরই যোগ্য মনে করছেন। শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিবেচনায় এসব শাখায় যারা পুরস্কার পেতে পারেন, তারা হলেন, ফরিদ কবির, নিতাই সেন, মাসুদ খান, ড. তপন বাগচী, জুলফিকার মতিন, গাউসুর রহমান, ড. সফি উদ্দিন আহমেদ, মিনার মনসুর, আহমাদ মোস্তফা কামাল, তপংকর চক্রবর্তী, রোমেন রায়হান, ড. শিরীণ আখতার, ড. আহমেদ মাওলা, ভীষ্মদেব চৌধুরী, সফিকুননবী সামাদী, জি এইচ হাবিব, রাজু আলাউদ্দিন, অনন্ত হীরা,  জয়দুল হোসেন, ড. জালাল ফিরোজ, অধ্যাপক আতিউর রহমান, ফখরুজ্জামান চৌধুরী ও ড. রকিবুল হাসান। 

তবে, বোদ্ধামহল কিংবা সাধারণ শুভাকাঙ্ক্ষীরা যে যাই বলুক, শেষ পর্যন্ত বাংলা একাডেমি কাকে কাকে পুরস্কারের জন্য যোগ্য মনে করবে, সে প্রতিষ্ঠানটিরই একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। বাইরে থেকে জল্পনা-কল্পনা যতই করা হোক কিংবা উপযুক্ত ব্যক্তির নাম যতই প্রস্তাব করা হোক, বাংলা একাডেমি সেই সব প্রস্তাব আদৌ গ্রহণ করবে কি না, এটা প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ব্যাপার। অতএব এখন শুধু অপেক্ষার পালা।



আরো পড়ুন