২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

‘শাহীওয়াল’ গরুতে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা

ফেরদৌস সিদ্দিকী, রাজশাহী || ১৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:৩১ পিএম
‘শাহীওয়াল’ গরুতে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা


রাজশাহীর দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে দুধ বিক্রি করে  আয় হয়েছে ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৫০ টাকা। একই সময়ে গরু বিক্রি করে আয় হয়েছে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০০ টাকা। এই হিসাবে এক বছরে মোট আয় হয়েছে ৭০ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫০ টাকা। স্থানীয় কৃষক ও খামার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহীওয়াল গরু পালনে ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে।

খামার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, শাহীওয়াল গরুর জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ছাড়াও পুষ্টিসমৃদ্ধ দুধ সরবরাহ, মাংসের ঘাটতি মেটাতে এঁড়ে বাছুর বিক্রি, উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ করছে এই খামার।  সরেজমিনে খামার পরিদর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন খামারিরা। হাতে-কলমে নিচ্ছেন প্রশিক্ষণও।

রাজশাহীর এই খামার তৈরি করা হয় ১৯৬৮ সালে। তখন খামারটি ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ব্রিডিং ফার্ম’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭৭ সালে এর নামকরণ হয় ‘নর্দার্ন ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট ফার্ম’। ১৭৯ একর জমিতে এ খামার গড়ে ওঠে। ১৯৮৪ সালে ১৭৮টি গাভী নিয়ে রাজশাহী ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট ফার্ম নামে যাত্রা হয় এ খামারের।


খামার সূত্রে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই খামারে বর্তমানে ৩৫৪ গবাদিপশু রয়েছে। খামার থেকে দৈনিক ২০০ লিটার দুধ পাওয়া হয়। গবাদিপশুর খাদ্যের জোগান আসে খামারের বিশাল এলাকাজুড়ে চাষ করা ঘাস থেকে। দৈনিক ৯-১০ হাজার কেজি ঘাস সরবরাহ হয় খামারে। খামার থেকে দৈনিক একটন গোবর উৎপাদন হয়। এর বড় অংশ জৈবসার উৎপাদনে ব্যবহার করে খামার কর্তৃপক্ষ। সেই সার ব্যবহার হয় ঘাস চাষে। এছাড়া এই খামার থেকেই বায়োগ্যাস ও জৈবসার প্রস্তুতকারীদের গোবরের জোগান দেওয়া হয়।

খামারের হিসাবের বাইরে আরও ৪২ প্রজনন ষাঁড় এআই ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই ল্যাব থেকে বছরে অন্তত সোয়া কোটি টাকার সিমেন উৎপাদন হয়।

সপ্তাহখানেক আগে রাজাবাড়ীহাট খামার থেকে শাহীওয়াল জাতের চারটি গরু কিনেছিলেন ফাহাদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গরুগুলোর রোগবালাই নেই বললেই চলে। শুধু আমি নই, বেশ কয়েকজন এ খামার থেকে গরু কিনেছেন। অনেকে খামার করেছেন। রাজশাহী অঞ্চলের আশীর্বাদ হয়েছে রাজাবাড়ীহাট ডেইরি উন্নয়ন খামার। এখন আমরা সহজেই উন্নত জাতের গরু পাই।’

রাজশাহীর ডেইরি সেক্টরের পরিচিত মুখ আরাফাত রুবেল বলেন, ‘রাজশাহীর রাজাবাড়ীহাট ডেইরি উন্নয়ন খামার গরুর জাত উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখছে। পাকিস্তান আমল থেকে এখানে শাহীওয়াল খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটি সারাদেশে জাত ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক খামারি এখান থেকে গরু কিনে খামার শুরু করেছেন। বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্রাহমা ফ্রিজিয়ান হলস্টেইন বিভিন্ন জাতের গরু পালন করলে খামারিদের লাভবান হওয়া সম্ভব।’ 

আরাফাত রুবেল আরও বলেন, ‘রাজাবাড়ীহাট ডেইরি উন্নয়ন খামারের অনেক বড় জায়গা রয়েছে। সেখানে ঘাস উৎপাদন, মুক্ত বিচরণভূমি রয়েছে। ফলে সঠিকভাবে গরু পালন সম্ভব। খামারিরা এ খামারের কার্যক্রমে খুশি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আমি শ্রেষ্ঠ খামারির পুরস্কার পেয়েছি। অবশ্যই এটি প্রাণিসম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।’



খামার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৫ দুগ্ধবতী গাভীসহ খামারে গরু ছিল ৩২৩টি। ওই বছর  ১ লাখ ৩০ হাজার ৮২ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। বাছুরের খাবার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৮৫ লিটার দুধ। বাকি ৬৫ হাজার ১৯৭ লিটার দুধ বিক্রি হয়েছে। আয় হয়েছে ৩২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৫ টাকা। ওই বছর ২৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকার গরু বিক্রি হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে ৮০টি দুগ্ধবতী গাভীসহ খামারে গরু ছিল ৩৪১টি। ওই বছর এক লাখ ৪৩ হাজার ৪৫১ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। বাছুরের খাবার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৫৭ হাজার ১০৪ লিটার দুধ। বাকি ৮৬ হাজার ৩৪৭ লিটার দুধ বিক্রি হয়েছে। আয় হয়েছে ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৫০ টাকা। ওই বছর ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০০ টাকার গরু বিক্রি হয়েছে।

সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৭৮টি দুগ্ধবতী গাভীসহ খামারে গরু ছিল ৩৫৪টি। এই চার মাসে ৪৮ হাজার ৫৬৯ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। বাছুরের খাবার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ২১ হাজার ৫৭৪ লিটার দুধ। বাকি ২৬ হাজার ৯৯৫ লিটার দুধ বিক্রি হয়েছে। আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫০ টাকা। ওই বছর ৩১ লাখ ৫৮ হাজার ২০০ টাকার গরু বিক্রি হয়েছে।

উপ-পরিচালক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, ‘খামারে শতভাগ শাহীওয়াল বুলকাফ ও বকনা উৎপাদনের উদ্দেশ্য থাকলেও অধিকাংশ গাভী ক্রস। পিওর গাভী বা বকনা আমদানি করা গেলে এ উদ্দেশ্য সফল হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ/



আরো পড়ুন