যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার (১০০) মারা গেছেন। বুধবার (২৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কিসিঞ্জারের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, জার্মান বংশোদ্ভূত সাবেক কূটনীতিক কানেকটিকাটে তার নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করেনি সংস্থাটি।
চলতি বছর ২৭ মে এক’শ বছর পূর্ণ করেন বর্ষীয়ান এই কূটনীতিক। নিক্সন এবং ফোর্ড প্রশাসনের সময় আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হেনরি কিসিঞ্জার।
অনেকের কাছে নন্দিত হলেও কারও কারও কাছে নিন্দিত হয়ে আছেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে শান্তির বার্তার বাহক যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্বে ফের সর্বোচ্চ শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রভাব বলয় নিয়ে সক্রিয় হয় বিশ্বরাজনীতিতে। কোনো কোনো সময় নৈতিক কূটনীতির বাহক হলেও কখনও আবার বিভিন্ন দেশে উসকে দিয়েছেন বৈপ্লবিক সংগ্রাম ও ইন্ধন দিয়েছেন সামরিক জান্তা সরকারকে।
তার কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বৈচিত্রপূর্ণ জীবনকে একটি প্রবন্ধে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। তার কূটনৈতিক কার্যাবলীর নথিপত্রের আনুমানিক ওজন ৩০ টন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ, আবার কখনো কখনো বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেন। তিনি একদিকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, অন্যদিকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবেও আখ্যায়িত।
কিসিঞ্জার ১৯২৩ সালের ২৭ মে জার্মানির একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার নাৎসি শাসন আমলে জার্মানি থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসেন। এখানেই তার বেড়ে উঠা। এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি মার্কিন নাগরিক হন। আর মার্কিন সেনাবাহিনীতে এবং পরে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্পসে তিন বছর চাকরি করেন।
স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
১৯৬৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিযুক্ত করেছিলেন। নিক্সনের অধীনে সেক্রেটারি অব স্টেট তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় তৎকালীন সময়ের বহু যুগ-পরিবর্তনকারী বৈশ্বিক ইভেন্টে তার হাত ছিল।
১০০ বছরে এসেও মানুষের কাছে কিসিঞ্জার কখনও প্রশংসিত হয়েছেন, আবার কখনও হয়েছেন নিন্দিত। কূটনৈতিক বুদ্ধির জন্য যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, ঠিক তেমনই নিন্দার পাত্রও হয়েছেন তার প্রাণঘাতী নিপীড়নমূলক কৃতকর্মের জন্য। কখনও মানুষ তাকে আখ্যা দিয়েছে বুদ্ধিমান হিসেবে, আবার কখনও ‘শয়তান’, ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশ কয়েকটি রক্তাক্ত সংঘর্ষের পেছনে তার হাত রয়েছে বলে মত ইতিহাসবিদদের। ভিয়েতনাম যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা, সেটাকে কম্বোডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে বিতর্কিত অবস্থান নেয়াসহ বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পেছনে তার মস্তিষ্ক কাজ করেছে।
ঢাকা বিজনেস/এমএ/