২৯ জুন ২০২৪, শনিবার



সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে ৯ বছরে ১৫৪ জনের মৃত্যু

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ || ২৭ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:০৪ পিএম
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে ৯ বছরে ১৫৪ জনের মৃত্যু


প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে হাওর এলাকায় শুরু হয় বজ্রপাত। আবহাওয়া ও বজ্রপাতের আগাম তথ্য না পাওয়া এবং সচেতনতার অভাবে হাওরে হাওরে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছেন কৃষক, দিনমজুর ও জেলেরা। প্রতি বছরই এই সংখ্যা বাড়ছে। গত ৯ বছরে ১৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, এই সময়টায় সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত ৯ বছরে (২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত) ১৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রান্তিক ও অসচ্ছল পরিবারের শিশু, নারী, কিশোর ও যুবক রয়েছেন। 

এদিকে, মৃত্যুবরণকারীর পরিবারকে সরকারিভাবে এককালীন কিছুটা সহযোগিতা করা হলেও পরিবারে একমাত্র উপার্যনশীল ব্যক্তিটিকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো। আর সরকারিভাবে বজ্রপাত নিরোধে যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। বজ্রপাত নিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবিও তাদের।

সুনামগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস থেকে জানা যায়, ২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত জেলার দিরাইয়ে ১৭ জন, তাহিরপুরে ৯ জন, জামালগঞ্জে ২ জন, ধর্মপাশায় ৭ জন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ১ জন, শাল্লায় ৮ জন, সুনামগঞ্জ সদরে ৭জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৬ জন, জগন্নাথপুরে ৪ জন, দোয়ারাবাজার ৪ জন, ছাতকে ২ জনসহ মোট ৬৮ জন বজ্রপাতে মারা যান।

২০১৫ সালে ৩৭ জন, ২০১৬ সালে ২০ জন ও ২০১৭ সালে ১১ জন ও ২০১৮ সালে ২৬ জন, ২০১৯ সালে ৯ জন, ২০২০সালে ১১ জন, ২০২১ সালে ১১ জন, ২০২২ সালে ১৯ জন ও ২০২৩সালে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুসহ সর্বমোট ১৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে হাওরে ধান কাটার সময় কৃষক, দিনমজুর ও বর্ষায় মাছ ধরার সময় জেলে পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে। এর পাশাপাশি আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। 

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বজ্রপাতে আহতদের ৫ হাজার ও নিহতদের এককালীন সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই সহায়তা আরও বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা জানান, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়া জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন, ধানের ফলন বিলম্বের কারণে খোলা মাঠে বেশি সময় কাটাচ্ছেন কৃষক, আবহাওয়া জ্ঞান সম্পর্কে তাদের অসচেতনতা ও উন্মুক্ত হাওর এলাকায় গাছপালার অভাব এবং সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের কারণে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। 

সিলেট বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘হাওর এলাকায় বজ্রপাত বেশি হওয়ার কারণ হলো সেখানে বজ্রপাত হলে কোনো প্রটেকশন পাওয়া যায় না। তাই বজ্রপাত সাধারণত হাইয়েস্ট, লংগেস্ট ও টলেস্ট বস্তুর উপর আঘাত করে। ইদানিং বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু হওয়ার কারণ হলো- অনেক ধান বিলম্বে পরিপক্ক হয়, তাই পুরো বজ্রপাত মৌসুমে হাওরে খোলা আকাশের নিচে মানুষ বেশি অবস্থান করেন। ফলে বজ্রপাতে মারা যান তারা।’ 

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘সুনামগঞ্জ হাওর এলাকার সবাইকে সর্তকতা অবলম্বন করে হাওরে কাজ করতে হবে। জেলার ৬টি উপজেলায় হাওরে ২৪টি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। একটি দণ্ড হাওরে ৩০০ ফুট এলাকার নিরাপত্তা দিচ্ছে। এর পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি আরও বেশি পরিমাণে দণ্ড স্থাপনের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করবো।’ 

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন