ঈশপের সেই খরগোশ আর কচ্ছপের গল্প থেকেই সবাই কচ্ছপের সঙ্গে পরিচিত। গল্পে দ্রুতগতির খরগোশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জিতে যায় ধীরগতির কচ্ছপ। শুধু এই গল্পে নয়, আয়ুর লড়াইয়েও জয়ী কচ্ছপ। আবার সবসময় এইটাই শেখানো হয় যে, পৃথিবীতে দির্ঘায়ু প্রাণী কচ্ছপ। দুনিয়ার দীর্ঘজীবী প্রাণীদের তালিকায় কচ্ছপের অবস্থান সেরা পাঁচে।
কচ্ছপের কিছু প্রজাতি বাঁচে ১০০ বছরেরও বেশি। সব প্রজাতির মধ্যে গ্যালাপাগোস জায়ান্ট প্রজাতির কচ্ছপ বাঁচে গড়ে ১৯০ বছর। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনা দ্বীপের জনাথন নামের কচ্ছপের প্রজাতি বাঁচে ১৮৫ বছর। তবে অ্যালডাব্রা কচ্ছপ এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘজীবী কচ্ছপ। সেশেলস দ্বীপে বাস করা এই কচ্ছপ প্রায় ২৫৬ বছর বেঁচে ছিল।
কিন্তু কখনো কী এই প্রশ্ন মাথায় এসেছে যে, কচ্ছপের এত বছর বাঁচার কারণ কি? কচ্ছপ যদি এত বছর বেঁচে থাকতে পারে তাহলে অন্য প্রাণীরা কেন নয়? কচ্ছপের এই দীর্ঘজীবীতা নিয়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা। এর কিছু রহস্যের জট খুলেছেন বিজ্ঞানীরা। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই রহস্য।
কচ্ছপের এই দীর্ঘায়ুর পেছনের রহস্য
কচ্ছপের শরীরের উপর একটি শক্ত খোল থাকে। তাদের অঙ্গগুলিকে যে কোনো প্রকার বাহ্যিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এই খোল। কেউ আক্রমণ করলে আত্মরক্ষার জন্য তারা খোলের মধ্যে ঢুকে যায়। কিন্তু, নিজেকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে কোনো প্রাণী ১৫০ বছরেরও বেশি বেঁচে থাকতে পারে না। অর্থাৎ, কচ্ছপের দীর্ঘায়ুর পিছনে রয়েছে আরও কয়েকটি কারণ।
বিজ্ঞানীদের মতে, কচ্ছপের দীর্ঘায়ুর পেছনের রহস্য লুকিয়ে আছে তাদের ডিএনএ গঠনের মধ্যে। আবার শুধুই যে ডিএনএ গঠন তা নয়, কচ্ছপের বিপাক প্রক্রিয়া খুব ধীরগতির। যে প্রাণীর বিপাক প্রক্রিয়া যত দ্রুত, তার আয়ু তত কম। কারণ, ধীরগতির বিপাক ক্রিয়ায় শক্তির ক্ষয় হয় কম। বেশিরভাগ প্রাণীদেহে মৌলিক কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলি দ্রুত বিপাক ঘটানোর সঙ্গে-সঙ্গে কোষেরও মৃত্যু ঘটায়। তবে কচ্ছপের ক্ষেত্রে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, তাদের দেহে সেসব মৌলিক উপাদানগুলি কম আছে। ফলে বিপাক ক্রিয়াও খুব ধীর গতিতে হয়। এতে কোষের মৃত্য়ুর হারও কমে যায়। ফলে তারা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। কচ্ছপ প্রয়োজনে তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরিবর্তন করতে পারে। আবার, প্রজননের ক্ষেত্রে তরুণ কচ্ছপ সক্রিয় থাকে। নিষ্ক্রিয় থাকে বৃদ্ধ কচ্ছপ। এটিও দীর্ঘ জীবনের পরিপূরক।
ঢাকা বিজনেস/এন/