২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



যে কারণে ৬ মাসে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০২:০৯ পিএম
যে কারণে ৬ মাসে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে


চারদিকে পুঁজিবাজার নিয়ে নানা নেতিবাচক মন্তব্যের পরেও গত ৬ মাসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এ বাজার মূলধন ও প্রধান সূচকের লেনদেন বেড়েছে। যা উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে। 

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে মনিটরিং জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়ার কারণে বাজার মূলধন  ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকের লেনদেন বেড়েছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে বিভিন্ন সময়ে নানারকম গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। যার  প্রভাব বাজারে পড়ে। ফলে বাজার মাঝে মাঝে ডাউন ট্রেন্ডে চলে যায়। এই গুজব যেন না ছড়ায়, সেজন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। যারা বাজার নিয়ে গুজব ছড়াবে, তাদের শাস্তি দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। ফলে গত ছয় মাসে গুজব খুব একটা ছড়ায়নি। পাশাপাশি গত ছয় মাসে বিভিন্ন মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। যে কারণে বাজার মূলধন বেড়েছে। বেড়েছে প্রধান সূচকের লেনদেনও।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে মোট বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। আর প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ছিল ৬ হাজার ২৮৫ পয়েন্ট। আর গত ৬ মাস আগে অর্থাৎ মার্চ মাসের ১২ তারিখে মোট বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ছিল ৬ হাজার ২৩৪ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে ৬ মাসের ব্যবধানে মোট বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ মোট বাজার মূলধন বেড়েছে। আর প্রধান সূচক বেড়েছে ৫১ পয়েন্ট। অর্থাৎ ০ দশমিক ৮১ শতাংশ মোট বাজার মূলধন বেড়েছে।

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করতে কয়েক গত কয়েক বছর ধরেই প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনের আন্ডারে কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু প্রডাক্ট উদ্বোধন করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন করতে হবে। ট্রেজারি বন্ড মার্কেট, অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), এসএমই বোর্ড কিন্তু এখনো পরীক্ষামূলকভাবে চলমান আছে। এসবের আরও কিছু পরিবর্তন করতে হবে।’

সাইফুর রহমান মজুমদার আরও বলেন, ‘পরিবর্তনগুলো যদি আগামীতে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য রাজস্ব বাড়বে। নতুন রাজস্বগুলো পুঁজিবাজারকে আগামীতে আরও গতিশীল করবে। পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজ ও কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ডিএসই কাজ করছে। সবার সহযোগিতা ছাড়া ডিএসই’র একার পক্ষে এসব বাস্তবায়ন করা কঠিন। টেকনোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্টেও ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে। এখন ভিজিবল হবে। আর বিনিয়োগকারীরা যদি স্বাভাবিকভাবে জেনেশুনে বাজারে বিনিয়োগ করে, তবে আগামীতে বাজার আরও বেশি ত্বরান্বিত হবে।’  

এদিকে সিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ মাসের ১২ তারিখে সিএসইতে মোট বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। আর প্রধান সূচক (সিএএসপিআই) ছিল ১৮ হাজার ৩৯৫ পয়েন্ট। আর গত ১০ সেপ্টেম্বর বাজার মূলধন এসে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর প্রধান সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৯৬ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে ৬ মাসের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৬ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। আর সিএএসপিআই বেড়েছে ২০১ পয়েন্ট। অর্থাৎ ১ দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়েছে প্রধান সূচক।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ড রেজিস্ট্রেশনের জন্য কমিশনে পেন্ডিং ছিল। সেগুলো রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে। ফলে তারাও (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বাজারে বিনিয়োগ করছে। যে কারণে গত ৬ মাসে বাজার মূলধন বেড়েছে। আরও কিছু রেজিস্ট্রেশনের অপেক্ষায় থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ড  রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে আগামীতে আরও বিনিয়োগ বাড়বে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যদি অ্যাকটিভ করা যায়, তবে তাদের থেকে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ করছে বিএসইসি।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন