২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর কর অব্যাহতি: যা বললেন তারা

হাকিম মাহি || ২৮ আগস্ট, ২০২৩, ০৪:০৮ পিএম
সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর কর অব্যাহতি: যা বললেন তারা


সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের মুনাফা ও রপ্তানি প্রণোদনার ওপর উৎসে কর ছাড়া আর কোনো কর দিতে হবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই সিদ্ধান্তকে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের গ্রাহকবান্ধব বলে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। এনবিআর বলছে, এই তিন খাতে উৎসে করকেই এখন থেকে চূড়ান্ত কর হিসেবে ধরা হবে। আমানতকারীকে তাদের আয়ের ওপর আর কোনো কর দিতে হবে না।

বুধবার (২৩ আগস্ট) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। নতুন এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী,  উল্লিখিত তিন খাতের জনগণকে বেশ ছাড় দেওয়া হলো।

এনবিআরের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যাংক আমানতে আয়ের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটার নিয়ম ছিল। এরপর আমানতকারী রিটার্ন দাখিল করার সময় আরও ২৫ শতাংশ কর কাটার বিধান রাখা হয়। কিন্তু এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরের ২৫ শতাংশ কর আর দেওয়া লাগবে না। যাদের রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা নেই, তাদেরও উৎসে করের বেশি কর দেওয়া লাগবে না। একইভাবে উৎস করের বাইরে অতিরিক্ত কর দিতে হবে না সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও।

পাশাপাশি রপ্তানি প্রণোদনার ওপর উৎসে করকেই এখন থেকে চূড়ান্ত কর হিসাবে ধরা হবে। ব্যবসায়ীরা রপ্তানির বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে নগদ প্রণোদনা পান। নতুন এ প্রণোদনার ক্ষেত্রে মোট সাড়ে ২৭ শতাংশ কর আরোপের বিধান রাখা হয়। এর মধ্যে ১০ শতাংশ ছিল উৎসে কর। বাকি সাড়ে ১৭ শতাংশ কর আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় পরিশোধ করতে হতো। তবে, নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রেও উৎসে করের বেশি কর ব্যবসায়ীদের পরিশোধ করতে হবে না।

এদিকে নতুন প্রজ্ঞাপনে উৎসে কর ১০ শতাংশকেই চূড়ান্ত কর ঘোষণাকে ইতিবাচক অর্থে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন প্রজ্ঞাপনে ১০ শতাংশ উৎসে করকেই চূড়ান্ত কর ঘোষণা এনবিআর ও সরকারের সঠিক সময়োযোগী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন তারা।

এ বিষয়ে ভিসতা ইলেকট্রনিক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন আকাশ বলেন, ‌‘সিদ্ধান্তটা ইতিবাচক। এতে রপ্তানি বাড়বে। ব্যাংকের সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানতে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে।’

এই খবরকে ইতবাচকভাবে দেখছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটের গুলশান-১ ব্রাঞ্চের অ্যাক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি নিশ্চয়ই ভালো উদ্যোগ। এখন হয়তো বা আগের চেয়ে ব্যাংকে সংঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানতধারীদের সংখ্যা বাড়বে। গ্রাহকরা উৎসাহী হবেন।’  

গুলশান-১-এর পূবালী ব্যাংক শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আবু সাদাদ মো. সায়েম বলেন, ‘ভালো একটি উদ্যোগ। এতে আশা করা যায়, ব্যাংকে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে। উৎসাহী হবেন গ্রাহকরা। এখন আর বাড়তি করতে দিতে হবে আমানতদারদের।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যাভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইউসুফ বলেন, ‘এটি ইতিবাচক। এতে গ্রাহকরা উৎসাহী হবেন।’

এদিকে, উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘এটি নিশ্চয়ই ইতিবাচক একটি সংবাদ। এতে একদিকে যেমন ব্যাংকে আমানত বাড়বে, সঙ্গে সঙ্গে রাজস্বও বাড়বে সরকারের। গ্রাহকবান্ধব এই উদ্যোগ।’

এনবিআরের ট্যাক্স পলিসি বিভাগের দ্বিতীয় সচিব বাপন চন্দ্র দাস ও মহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র ও রপ্তানি প্রণোদনার ওপর উৎসে কর অব্যাহতি সব গ্রাহকের জন্য। কিন্তু সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানতে কর অব্যাহতি সবার জন্য নয়। যে-সব সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মকর্তাদের বছর শেষে রিটার্ন জমা দিতে হয় না, এটা শুধু তাদের জন্য। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকদের জন্য আগের মতোই উৎসে করসহ সব কর দিতে হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন