১৮ মে ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

যে কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি গুদামে ধান কেনা বন্ধ

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ০৯ আগস্ট, ২০২৩, ০৫:০৮ পিএম
যে কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি গুদামে ধান কেনা বন্ধ


প্রতি মৌসুমে জেলা পর্যায়ে খাদ্য বিভাগের মাধ্যমে ধান-চাল সংগ্রহ করে সরকার। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবার বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৯ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলা খাদ্য বিভাগ। তবে হঠাৎ করেই ধান কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বিপাকে পড়েছেন কৃষি বিভাগের নির্বাচিত কৃষকরা। তবে, খাদ্য বিভাগের দাবি, ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত না হলেও চালের কোনো সংকট হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লাখ ১১ হাজার ৪০৫ হেক্টের জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। বাজারে বিক্রির পাশাপাশি অ্যাপে নিবন্ধিত কৃষকরা যাচাই-বাছাই শেষে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। গত ৭ই মে থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে জেলা খাদ্য বিভাগ। এবার কৃষকের কাছ থেকে প্রতিমণ ১ হাজার ২০০ টাকা দরে ধান সংগ্রহ শুরু হয়। যা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলার কথা।

কিন্তু  কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গত ২৩ জুলাই থেকে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা বন্ধ করে দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য বিভাগ। ফলে ২২ জুলাই পর্যন্ত সংগ্রহ হয় ৫ হাজার ১১২ টন ধান।

ধান কেনা বন্ধের কারণ স্পষ্ট না করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার কথা জানানো হয় কৃষকদের। তবে এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে চান তারা। ধান বিক্রির আশায় প্রতিদিনই জেলার খাদ্য গুদামগুলোতে ভিড় করছেন কৃষকরা।

মো. আল মামুন নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার এক কৃষক বলেন, ‘লটারির মাধ্যমে খাদ্য বিভাগে ধান দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছি। গুদামে ধান দেওয়ার জন্য শুকিয়ে বস্তায় ভরে রেখেছি। কিন্তু সাতদিন ধরে ঘুরেও গুদামে ধান দিতে পারছি না। বাজারে বেচতে গেলে প্রতি মণে আমার অন্তত ১০০ টাকা করে লোকসান হবে।’

জামাল উদ্দিন নামে জেলা শহরের গোকর্ণ এলাকার আরেক কৃষক বলেন, ‘প্রতিবছরই ধান দিয়ে থাকি গুদামে। এবারও লটারিতে আমার নাম এসেছে। আমরা কৃষকরা উৎপাদিত ধান বিক্রি করেই পরিবার চালাই। এখন সরকার ধান না নেওয়ার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এবার সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে বেশি। ফলে বাজারেও সেই দামে ধান বিক্রি করতে পারছি না। এ অবস্থায় আমাদের ধানগুলো সরকার না নিলে আমরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

খাদ্য বিভাগ ধান কেনা বন্ধের কারণ স্পষ্ট করা না হলেও সূত্র বলছে, জেলার মোট ১০টি খাদ্য গুদামের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ২১ হাজার মেট্রিক টন। তবে অতিরিক্ত হিসেবে সংরক্ষণ করা যায় আরও সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে গুদামগুলোতে মজুত আছে ২১ হাজার ৫৫৩ মেট্রিক টন। ফলে গুদামে জায়গারও সংকট আছে। এছাড়া ভারত সরকার চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে ধানের বদলে চাল সংগ্রহের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে সরকার। মূলত কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের পর সেগুলো আবার চালকল মালিকদের দেওয়া হয় চাল তৈরি করে দেওয়ার জন্য। এতে সময় ও খরচ বাড়ে। 

ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের তদারক কর্মকর্তা কাউছার সজীব বলেন, ‘জেলার সাত উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত কৃষকদের মধ্যে কৃষি বিভাগের নির্বাচিত কৃষক এবং দুই উপজেলায় উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয় ধান সংগ্রহের জন্য। এবার ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চাল পুরোপুরি সংগ্রহ হবে। এছাড়া চালকল মালিকরা অতিরিক্ত আরও ২০ হাজান মেট্রিক টন চাল দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। আমরা সেই আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। ফলে চালের কোনো সংকট তৈরি হবে না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবীর বলেন, ‘গুদামে জায়গার সংকট আছে, ঠিক সেটি বলা যাবে না। আমরা একদিকে সংগ্রহ করছি, অন্যদিকে আবার গুদাম থেকে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ধান কেনা বন্ধ রেখেছি। নির্দেশনা পেলেই আবার কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করবো। যেহেতু ধান কেনা বন্ধ, তাই কৃষকরা যেন গুদামে এসে ভিড় না করেন, সেজন্য আমরা মাইকিং করেছি।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন