বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মান্না। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান বাংলা চলচ্চিত্রের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১৫ বছর। আজও মান্নার বিকল্প আসেনি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে। শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে মান্নার উপস্থিতি মিস করেন দর্শক।
এদিকে নায়কের স্ত্রী শেলী মান্না দাবি করছেন, তার স্বামীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। ইউনাইটেড হাসপাতালের অবহেলার কারণেই মৃত্যু হয়েছে মান্নার। তাই তিনি আদালতের কাছে বিচার দাবি করেছেন। রোববার (৬ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেলী মান্না প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শেলী বলেন, '২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালের ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেছি। এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। আমি মান্না হত্যার বিচার চাই। মান্না হত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ তিনি স্বজন হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর মর্মটি তিনি ভালো বোঝেন।'
২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালের ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেন নায়ক মান্নার শ্যালক রেজা কাদের। পরে এই মামলার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হয়।
বিচারবিভাগীয় তদন্তে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি ছয় ডাক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরদিনই তারা হাইকোর্টে জামিনের জন্য গেলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাদের আট সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন।
ওই বছরের ১৬ মার্চ চিকিৎসকরা আত্মসর্মপণ করলে ৫০ হাজার টাকা বন্ডে সই করে জামিন পান। এরপর ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর ৬ ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিশেষ দায়রা জজ ফিরোজ আলম। এরপর এক, দুই ও তিন নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য থাকা দিনেই সংশ্লিষ্ট বিচারক বদলি হয়ে যান। থেমে যায় সাক্ষ্যগ্রহণ।
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। কিন্তু সেই রিট আবেদনের শুনানিও শুরু করছেন না আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরই মধ্যে শুনানির জন্য পনেরো কার্যদিবস ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষ শুনানি না করে সময়ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন মান্নার মামলার আইনজীবী ড. ব্যারিস্টার খন্দকার মুহাম্মদ মুশফিকুল হুদা। আগামী বৃহস্পতিবার ১ ডিসেম্বর এই মামলায় শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে কিছুটা অসুস্থ বোধ করায় গাড়ি চালিয়ে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে যান মান্না। ওই হাসপাতালে যাওয়াই ছিল তার জীবনের শেষ যাওয়া। সেদিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহলোয় তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।
নায়ক মান্নার স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'আপনারা সবাই জানেন, প্রযোজন ও নায়ক মান্না মারা গেছেন। ২০০৮ সালে আমরা একটি মামলা করেছিলাম। অবহেলাজনিত অভিযোগে মামলাটি করেছিলাম। সে সময় ভেবেছিলাম মামলাটির অচিরেই বিচার হবে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল এতো দিন হলো মামলাটি শুনানি হয়নি। কোনো সুরাহা না পেয়ে আমি এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন দিচ্ছি।'
শেলী বলেন, 'যেভাবে তার মৃত্যুটি হয়েছিল তা নেগলেজেন্সি। সে হাসপাতালে গেছে কিন্তু ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টায়। তখন কোনো ডাক্তার পাওয়া যায়নি। সে নিজেই গাড়ি চালিয়ে গেছেন। তার এই বিষয়ে কোনো ডাক্তার ছিল না। আমার স্বামী যখন ভোর ৫টা সাড়ে ৫টায় যায়, সেই ডকুমেন্ট আছে। তিনি যখন হাসপাতালে যান তখন প্রপার ডাক্তার ছিল না। ডিউটিরত ডাক্তাররা ছিল। তারা হয়তো চেষ্টা করছিল। সকাল ৯টার পরে তার প্রপার ডাক্তার এসেছিল। তখন আদো কি আমার হাজবেন্ড বেঁচে ছিল? আমার প্রশ্ন হলো তার অনেক কাজ ছিল, তার ওপর কত দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তিনি অবহেলা অনাদরে চলে গেছেন। সকাল সাড়ে ৭টার সময় ইনজেকশন দেওয়া হয়। তখন আমার ভাই আশঙ্কা করেছিল। মান্না বমি করেছিল। সেই সময়েও কোনো প্রপার ডাক্তার ছিল কিনা। এখন মামলাটি যে পর্যায়ে এসেছে। আমাদের আইনজীবী ভালো বলতে পারবেন মামলাটি কেন দীর্ঘায়িত হচ্ছে।'
আজকে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মামলার খোঁজ নিতে এসেছিলাম। একটা মামলা যখন হয়েছে, অবহেলা অনাদরে চলে গেছেন। আমি চাই একটি সুষ্ঠু বিচার। এছাড়া আমি কি চাইবো।'
ঢাকা বিজনেস/এন/