১৮ মে ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

যে কারণে পুঁজিবাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্তি কমলো (ভিডিও)

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ০২ আগস্ট, ২০২৩, ০৭:০৮ পিএম
যে কারণে পুঁজিবাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্তি কমলো (ভিডিও)


পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও)-এর মাধ্যমে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিমাণ কমছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই মূলত নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির পরিমাণ কমেছে।

ডিএসই সূত্রটি বলছে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ২০২১ সালে নতুন ৫টি কোম্পানি, ২০২২ সালে ২টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। আর ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে ২০২১ ও ২০২২ সালে ৮টি করে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলেও চলতি বছরে (২০২৩) মাত্র ২টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। পাশাপাশি চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। ফলে দেশের পুঁজিবাজারেও মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহ পাচ্ছে না। পুঁজিবাজারে এলেও নতুন কোম্পানি আদৌ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাবে কি-না, তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বিএসইসি এবং  ডিএসই অন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয়হীনতা রয়েছে। প্রতি দুই বছরে অন্তত একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা বা ইস্যু ম্যানেজ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে। এ কাজে তারা ব্যর্থ হলে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ গত কয়েক বছর ধরে অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক এ কাজে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ তাদের দেওয়া হয়নি কোনো  শাস্তি। এমন পরিস্থিতিতে তারাও নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করানোয় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা জানান, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা কোভিড-১৯, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এসবের প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নিলেও সেগুলোর সবটাই সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে নতুন নতুন কোম্পানিও সেই অর্থে খুব একটা তালিকাভুক্ত হয়নি। আবার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এও জানিয়েছেন, কমিশনের গাফিলতির কারণেও নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির পরিমাণ কমে গেছে। কমিশনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী তারেক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বর্তমান কমিশন বৈশ্বিক নানা অস্থিরতায় ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি।  যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক পুঁজিবাজারে। এছাড়া পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত অস্থিরতা থাকায় গত ২/৩ বছর আগে ঘন ঘন যেন আইপিও অনুমোদন না দেওয়া হয় সেজন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন করেছিল। কমিশনকে তারা লিখিত আকারে প্রস্তাবও দিয়েছিল। যার কারণে কমিশন ঘন ঘন কোম্পানি তালিকাভুক্তি করার ব্যাপারে পিছুপা হয়েছিল। তবে আমার ধারণা ২০২৪ সাল থেকে আইপিও’র মাধ্যমে তালিকাভুক্তির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’

 বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি আজাদ আহসান বাচ্চু ঢাকা বিজনেস বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের গাফিলতির কারণে পুঁজিবাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। বর্তমান কমিশনকে এই ব্যাপারে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)-এর সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এ অবস্থায় ভালো কোম্পানি উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাচ্ছে না। ২ বছর পর পর অন্তত একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত অথবা ইস্যু ম্যানেজ করার যে রুলস রয়েছে; সে রুলসটাও আমাদের জন্য কতটা যুক্তিসংগত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো সরাসরি রুলসের বিপক্ষে কথা বলতে পারি না।  এছাড়া কোম্পানিগুলো যদি না আসতে চায়, তখন আমাদের কী করার আছে? তবে মার্কেট যখন ভালো হবে, তখন উদ্যোক্তারাও তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহী হবে। তখন আইপিও’র সংখ্যা বেড়ে যাবে।’

ডিএসই-এর পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘নতুন নতুন আইপিও আসার ব্যাপারে ডিএসই কাজ করে যাচ্ছে। তবে ডিএসই’র আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।’

বিএসইসি-এর নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বৈশ্বিক নানা অস্থিরতার কারণে পুঁজিবাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্তির পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। তবে কোম্পানি তালিকাভুক্তির ব্যাপারে মূল কাজ করতে হয় ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে। তারা কমিশনে নতুন কোম্পানির প্রসপেক্টাস জমা দেবে। কমিশন প্রসপেক্টাস দেখে যদি মনে করে অনুমোদন দেবে, তো দেবে। যদি মনে করে অনুমোদন দেবে না, তো দেবে না।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সরাসরি নতুন কোম্পানিকে আইপিওতে আনতে পারি না। তালিকাভুক্ত করতে পারি না। তবে হ্যাঁ, আমরা পলিসি তৈরি করে থাকি। অথবা ভালো মানের কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার ক্ষেত্রে যদি নতুন পলিসির প্রয়োজন হয়, তবে কমিশন সেটা করবে বা করে। ভালো ও পর্যাপ্ত কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কমিশন ম্যাক্রো লেবেলে অ্যাওয়ার্নেস বাড়িয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়াবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট রয়েছে; যারা আইপিও বা নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। পাইপলাইনে অনেক কোম্পানি রয়েছে।’

 বিএসইসি-এর নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫-এর ক্রাইটেরিয়াগুলো ফুলফিল করতে পারেনি। যে কারণে আবেদনও করতে পারেনি। এখন যেহেতু অবস্থা কিছুটা ভালো। তাই গেলো জুন ইন্ডিংয়ের অ্যাকাউন্স দিয়ে বেশ কিছু কোম্পানির আবেদন আসবে। আগামীতে ভালো মানের পর্যাপ্ত কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।’

 ঢাকা বিজনেস/এনই/ 
<>



আরো পড়ুন