০৪ মে ২০২৪, শনিবার



জানা-অজানা
প্রিন্ট

অ্যাপলের ৫টি ব্যর্থ পণ্য

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ০১ আগস্ট, ২০২৩, ০৪:০৮ পিএম
অ্যাপলের ৫টি ব্যর্থ পণ্য


বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক টেক জায়ান্ট অ্যাপল। ফোর্বসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৩.০২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন নিয়ে সিংহাসন দখল করে আছে অ্যাপল। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রথম আমেরিকান কোম্পানি হিসেবে ১ ট্রিলিয়নের ঘর ছুঁয়েছে ২০১৮ সালের আগস্টে। এতে অ্যাপলের সময় লেগেছে ৪২ বছর। এরপর মাত্র ৪ বছরেই বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হিসেবে ৩ ট্রিলিয়নের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন অর্জন করে অ্যাপল। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অভাবনীয় এই মাইলফলক অতিক্রম করে কোম্পানিটি।

অনেকেই মনে করতে পারে যে অ্যাপল অনেক সহজে মার্কেটে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু না, অ্যাপলকেও গ্রহণ করতে হয়েছে ব্যর্থতার তিক্ত স্বাদ। তাদের অনেক প্রোডাক্টই বাজারে আশানুরূপ মাত্রায় ব্যবসা করতে পারেনি। অ্যাপলের এমন ব্যর্থ ৫টি পণ্য নিয়েই আজকের এই আয়োজন।


The Apple III

অ্যাপল থ্রি অ্যাপলের ইতিহাসে প্রথম ব্যর্থ পণ্য। অ্যাপল টু দিয়ে টেকনোলজি জগতে সাড়া জাগানোর পর এর উত্তরসূরি হিসেবে ‘অ্যাপল থ্রি’ কম্পিউটার বাজারে আনে অ্যাপল। ১৯৮০ সালের মে মাসে ‘অ্যাপল থ্রি’ বাজারে আসে। কোম্পানি ভেবেছিল এটি অ্যাপলের সফলতাকে আরও শীর্ষে নিয়ে যাবে। কিন্তু এই কম্পিউটার হয়ে যায় অ্যাপলের প্রথম ব্যর্থ প্রোডাক্ট। কম্পিউটারটিতে কোনো ধরনের কুলিং ফ্যান না থাকায় অল্প সময় ব্যবহারেই যন্ত্রটি আগুনের মতো গরম হয়ে যেত। অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার ফলে কম্পিউটারের সার্কিট বোর্ডে সমস্যা দেখা দিত। পাশাপাশি সকেট থেকে চিপগুলো খুলে যেত। এজন্য যন্ত্রের সম্পূর্ণ সিস্টেমেই সমস্যা লেগে থাকত। এই কারণে অ্যাপল বাধ্য হয়ে বাজারে থাকা প্রায় ১৪ হাজার কম্পিউটার সরিয়ে নেয়। 


The Apple Lisa

অ্যাপলের এই কম্পিউটারে একটি গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস যুক্ত ছিল। বর্তমানে সবার হাতে হাতে ল্যাপটপ পাওয়া যায়। কিন্তু ১৯৮০ এর দশকে গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস সংবলিত একটি পার্সোনাল কম্পিউটার থাকা ছিল মোটামুটি দুর্লভ। কারণ, ওই সময়ে কম্পিউটার এখনকার মতো সহজলভ্য ছিল না। এজন্য প্রায় ১০ হাজার ডলার খরচ করে নিজের প্রথম গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসসহ পার্সোনাল কম্পিউটার হিসেবে অ্যাপল লিসা কিনতে দ্বিধা করেনি মানুষ। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের এই ফিচার বাদে কম্পিউটারটির এত বেশি দাম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। এছাড়াও ডিভাইসটি ছিল অনেক ধীরগতির। ব্যবহার করাও বেশ কঠিন ছিল। ব্যবহারকারীদের বেশ হতাশ হতে হতো। ফলে ১৯৮৬ সালে অ্যাপল ব্যবহারকারীদের জন্য এক অভিনব অফার নিয়ে আসে। অ্যাপল লিসার ব্যবহারকারীরা তাদের কম্পিউটারের বিনিময়ে ৪১০০ ডলারের ম্যাক প্লাস মাত্র ১৫০০ ডলারে কিনতে পারবে। আর এতে কাজও হয়। অনেকেই সেই সুযোগ লুফে নেয়। প্রতিটি কম্পিউটার ৯,৯৯৫ ডলারে বিক্রি করে তারা। এভাবে প্রায় ১০ হাজার লিসা কম্পিউটার বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিল অ্যাপল। এই ১০ হাজার কম্পিউটার বানাতে তাদের খরচ হয়েছিল ১৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আর এগুলো থেকে প্রাপ্ত আয়ের পরিমাণ ছিল ১০০ মিলিয়ন ডলার।


Apple Macintosh Portable

এটি ছিল অ্যাপলের প্রথম ব্যাটারিচালিত ল্যাপটপ। ম্যাকিন্টোশ পোর্টেবল কম্পিউটারটি নামে পোর্টেবল হলেও এটি ছিল অনেক ভারী। এর ওজন ছিল প্রায় ৭ কেজি। ব্যাটারির জটিলতার কারণে প্লাগ-ইন করার পরেও কম্পিউটারটি মাঝেমধ্যে অন হতো না। ১৯৮৯ সালে বাজারে আসে অ্যাপলের এই পণ্য। মাত্র ২ বছর বাজারে স্থায়ী ছিল ডিভাইসটি। তৎকালীন ৭,৩০০ মার্কিন ডলারের এই কম্পিউটারে ছিল ১ মেগাবাইট র‍্যাম এবং ২৫৬ কিলোবাইট রম। পোর্টেবলের নামে ডিভাইসটি ছিল একপ্রকার ডিজাস্টার।


Copland

কপল্যান্ড ছিল অ্যাপলের অন্যতম উচ্চাভিলাষী এক প্রজেক্ট। ১৯৯০ এর দশকে ম্যাকিন্টোশ সিস্টেম যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় অ্যাপল কপল্যান্ড নামে নতুন একটি মডেল সিস্টেম বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। কোম্পানী থেকে বলা হয়েছিল, কপল্যান্ড অপারেটিং সিস্টেমটি উইন্ডোজের বিভিন্ন অ্যাপ রান করার পাশাপাশি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবে। কিন্তু কয়েকবছর চেষ্টার পরেও অ্যাপল কোনো আশানুরূপ ফলাফল দেখাতে পারেনি। অবশেষে প্রজেক্টটি বাতিল করে অ্যাপল।


The Newton

বিজ্ঞানী নিউটন আর আপেল যেন একই সূত্রে গাঁথা। সেই কাহিনির সঙ্গে মিল রেখেই অ্যাপল তাদের কোম্পানির প্রোডাক্ট দ্য অ্যাপল নিউটন দিয়ে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিল। ১৯৮৭ সালে তারা অ্যাপল নিউটন ডিভাইসের মাধ্যমে পিডিএ মার্কেটে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। এই যন্ত্রের বিশেষ ফিচার ছিল হাতের লেখাকে টেক্সটে পরিণত করা। কিন্তু ডিভাইসটির পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। তাই একে অ্যাপলের অন্যতম ব্যর্থ পণ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

ঢাকা বিজনেস/এন/



আরো পড়ুন