২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিক-বর্জ্য দিলেই মিলছে খাদ্যপণ্য-পোশাক

তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার || ০৬ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৭:৩১ পিএম
সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিক-বর্জ্য দিলেই মিলছে খাদ্যপণ্য-পোশাক


সেন্টমার্টিনে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক আর পথেঘাটে পড়ে থাকছে না। এসব প্লাস্টিক পরিষ্কার করার জন্য কাউকে বাধ্যও করতে হচ্ছে না। এমনকি পরিবেশদূষণ থেকে রক্ষা পেতে শাস্তির ব্যবস্থাও নেই এখানে। কারণ এসব পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিবর্তে হয়ে উঠছে কেনাকাটার বিনিময় মাধ্যম। সেন্টমার্টিন-বাসীকে এখন নগদ টাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য-পোশাক কিনতে হচ্ছে না। টাকার পরিবর্তে তারা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই কিনতে পারছেন এসব পণ্য।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন,  ১ থেকে ৫ কেজি প্লাস্টিক জমা দিয়ে চাল, ডাল, তেল, মুরগী, ডিম, আটা, সুজি, কম্বল, শীতের কাপড় ও লুঙ্গী কেনা যাচ্ছে। প্লাস্টিক পরিষ্কারের পাশাপাশি উপকৃত হচ্ছেন তারা। আর সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) সকালে দ্বীপে দেখা যায়, সবার হাতে বড় বড় ব্যাগ-বস্তা। বৃদ্ধ থেকে শিশু, যুবা থেকে তরুণীÑসবাই ছুটছেন এই ব্যাগ-বস্তা নিয়ে।  আর এই বড় বড় ব্যাগ ও বস্তার ভেতরে রয়েছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, চিপ্স ও জুসের প্যাকেট। বেড়াতে এসে সৈকতে বালিয়াড়িতে পর্যটকদের ফেলে দেওয়া এসব প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন দেশের একমাত্র‌ প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা। যা জমা দিয়ে বিনিময়ে বাজার করবেন তারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে তাদের টাকার প্রয়োজন হচ্ছে না। এসব পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিলেই তারা কিনতে পারছেন প্রয়োজনীয় পণ্য। 

দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ‘পর্যটকরা দ্বীপে এলেই  প্লাস্টিকের বোতল, চিপস ও জুসের প্যাকেট সৈকতের বালিয়াড়িতে ফেলে দেন। আর আমরা এসব পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করি। গত এক সপ্তাহে ৫ বস্তা প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছি। এখন এসব প্লাস্টিক জমা দিয়ে ব্যাগ ভর্তি বাজার করে ঘরে নিয়ে যাবো। বেলা ১২টা না বাজতে দ্বীপের মেরিন পার্ক এলাকা মানুষে ভরে যায়। বস্তাভর্তি প্লাস্টিক নিয়ে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকেন নারী-পুরুষ। সঙ্গে শিশুরাও। এরপর প্লাস্টিক জমা দিলেই মিলছে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজীয় পণ্য।’



দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা খাতুন বলেন, ‘১০ কেজি প্লাস্টিক জমা দিয়ে একটি মুরগী,  চাল,  তেল ও ১ ডজন ডিম কিনেছি। অনেক খুশি আমরা। এদিকে দ্বীপের প্লাস্টিক পরিষ্কার হচ্ছে, অন্যদিকে বলতে গেলে বিনামূল্যে ব্যাগভর্তি বাজার পাচ্ছি।’

দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ‘আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা। এছাড়া, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেওয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্টমার্টিনে না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেন।’ তিনি বলেন, ‘দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিকে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে বাঁচাতে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। আর সহযোগিতায় রয়েছে জেলা প্রশাসন। পর্যটক ও স্থানীয়দের ফেলা দেওয়া এসব প্লাস্টিক বর্জ্য দূর্ষিত করছে সমুদ্রের প্রাণ-বৈচিত্র্যকে। অথচ এসব বর্জ্য অপসারণে নজর নেই কারও।’

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘দ্বীপ থেকে এসব প্লাস্টিক ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইক্লিং করা হয়।’  তিনি আরও বলেন, ‘এসব  প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরি করেছেন বিশাল আকৃতির একটি ‘প্লাস্টিক দানব’। ধারণা করা হচ্ছে,  এই দানব এশিয়ার সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু। এই দানব তৈরির মাধ্যমেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানব সমাজকে একটি বার্তা দিতে চায় যে, প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যেই হারে দূষিত হচ্ছে, তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে। আর এই দানবই পরবর্তী সময়ে মানবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনসহ অন্যান্য দ্বীপ ও সমুদ্রসৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  এরপরও মানুষের অসচেতনতার কারণে পুরোপুরি পরিবেশদূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন। আশা করছি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি ১৫ দিন পরপর প্লাস্টিকের বিনিময়ে এসব পণ্য সরবরাহ করে বিদ্যানন্দ। গত মাস থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে প্রতিবার ৮ থেকে ১০ টন প্লাস্টিক জমা দেয় দ্বীপের মানুষ। যা ঢাকায় নিয়ে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন