১৭ জুন ২০২৪, সোমবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

শেয়ারবাজার চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে: সাইফুর রহমান

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১৭ জুলাই, ২০২৩, ০২:০৭ পিএম
শেয়ারবাজার চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে: সাইফুর রহমান সাইফুর রহমান মজুমদার


বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিপূর্ণ পারফর্ম করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির  ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেশের শেয়ারবাজার চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’সম্প্রতি রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই’র প্রধান কার্যালয়ে  ঢাকা বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সাইফুর রহমান বলেন,  ‘২০১১ সাল থেকে বাজারের সিস্টেমেটিক গ্রোথ আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। যে কারণে  ইনভেস্টর ও ট্রেড ভলিয়মে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। আমাদের যারা পলিসি মেকার রয়েছেন, তারাও অ্যানালাইসিস করে এসবের সমাধান করতে পারেননি।   আমি নিয়োগ পাওয়ার পর ডিএসই ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নানমুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। যার কিছু বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে হয়েছে।’ 

ডিএসই-র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ডিএসই ছাড়াও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) রয়েছে। এক্সচেঞ্জগুলো ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে। কিন্তু ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হলেও এর বাস্তবায়ন পুরোপুরি করা হয়নি। এক্সচেঞ্জগুলোর মালিকানা পরিবর্তনে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু স্ট্রেটেজিক শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে। এক্সচেঞ্জগুলো দীর্ঘদিন নট ফর প্রফিট ছিল। পরবর্তী সময়ে সেগুলো ফর প্রফিট হয়েছে। এখন শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দেওয়া হচ্ছে।’

মার্কেট একটা সাইজেবল পর্যায়ে না থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে সাইফুর রহমান বলেন, ‘এর সমাধানে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারিনি। ফলে মার্কেটের উন্নয়নে ভালো কিছু বয়ে আনেনি। আমার ক্যাপিটাল মার্কেটে ক্যারিয়ারের শুরুতে একটা গ্রুপ অব কোম্পানির ব্রোকারেজ হাউজে কাজ করেছি। সেখানে একটা ইউনিট ব্রোকারেজ হাউজে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছি।’ 

সাইফুর রহমান  আরও বলেন, ‘আসলে বাস্তবতা হচ্ছে ডিএসই হচ্ছে শেয়ার মার্কেটের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ডিএসই পরিপূর্ণ পারফর্ম করতে পাচ্ছে না। এসব সীমাবদ্ধতা দূর করা উচিত। মার্কেটের উন্নয়নে ডিএসইকে এককভাবে চাপ দিলে হবে না। ডিএসই একটা সেনসিটিভ অর্গানাইজেশন। এখানে আমি দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকায় বিভিন্ন সমস্যা ফেস করছি। কাগজে কলমে আমাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এর বাস্তবায়নে অনেক জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব ২ থেকে ৩ মাসের বেশি হওয়া উচিত না।’

ভারপ্রাপ্ত এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে কার্যকর ডেট মার্কেট নেই। আমি ডিএসইতে নিয়োগ পাওয়ার পর কমিশন ডেট সিকিউরিটিজের জন্য ড্রাফট রুল দেয়। আমরা এই রুলস স্টাডি করে দেখলাম এই রুল কোনোভাবেই একটা দ্রুত ডেট মার্কেট প্রতিষ্ঠা করার উপযোগী নয়। আমাদের যখন অভিমত দিতে বললো আমরা তখন এর ওপর কাজ করলাম। আইপিও প্রক্রিয়া হলে কী হবে, প্লেসমেন্ট হলে কী হবে, মিক্সড করলে কী হবে বা ডেট ইস্যুর মধ্যে অন্যান্য যে ভেরিয়েশন আছে; সেগুলো করলে কী হবে? এসব বিবেচনা করে আমরা পুনরায় ডেট ইস্যু রুল গঠন করে কমিশনে জমা দেই। কমিশন তার ভিত্তিতে কিছু কাটছাট করে ডেট ইস্যু রুল তৈরি করে। এই ডেট ইস্যু রুল পরবর্তী সময়ে আলোর মুখ দেখে। এই ডেট ইস্যু রুলের ভিত্তিতেই কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা আলাদা করে ডেট বোর্ড গঠন করলাম, যেখানে এখনো টেকনোলজিক্যাল কিছু অংশের কাজ বাকি আছে।’

সাইফুর রহমান  বলেন, ‘ইতোমধ্যে ডেট মার্কেট শুরু হয়েছে। আমি সিওও হিসেবে যখন দায়িত্ব নিলাম, তখন চিহ্নিত করি বর্তমান যে ইকুইটি মার্কেট আছে, সেই মার্কেটকে স্বচ্ছ করতে হবে। স্বচ্ছ করতে যে বাধাগুলো আছে সেগুলো দুর করতে হবে। এবং ভালো কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি কার্যকর বন্ড মার্কেট তৈরির জন্য যে রুল করা হয়েছে, সেখানে কমিশনকে সর্বাত্বক সহযোগিতা আমার নেতৃত্বেই ডিএসই থেকে গেছে। আমাদের আরো অনেক দুর যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর ডেট মার্কেট করতে গেলে রাষ্ট্রীয় পলিসিরও বিষয় আছে। সেই রাষ্ট্রীয় পলিসিগুলো কিন্তু আমরা বার বার বলে যাচ্ছি রেগুলেটরদেরকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংককে। সঠিক পলিসি না দিলে কার্যকর ডেট মার্কেট তৈরি সম্ভব না। কার্যকর ডেট মার্কেট তৈরি না হলে ক্যাপিটাল মার্কেটের যে সাপ্লিমেন্ট সেটি সঠিকভাবে হবে না। ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর যে চাপ পড়ছে সেটার থেকে উত্তরণ হবে না। পাশপাশি আমাদের জিডিপি গ্রোথের সঙ্গে আমাদের শেয়ার মার্কেট তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। এই বিষয়গুলো আমার নেতৃত্বেই ডিএসই তুলে ধরেছে।’

ভারপ্রাপ্ত এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ‘মার্কেটের উন্নয়নে, ডিএসই’র প্রয়োজনে সংস্থাটিকেই তুলে ধরতে হবে। এবং তা এমডির নেতৃত্বেই করতে হবে। ডেট মার্কেট জিডিপি’র ২ শতাংশে আনতে হবে। রেগুলেটর, ডিএসই ও পলিসি ম্যাকারের মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে না। সেগুলো দুর করতে হবে। লিস্টেড কোম্পানির সুপারভিশন ঠিকভাবে হচ্ছে না। সঠিকভাবে সুপারভিশন করতে হবে। মার্কেটের প্রপার গভর্নেস নিশ্চিত করার দায়িত্ব কিন্তু রেগুলেটর এবং ডিএসইর। কিন্তু তুলে ধরার দায়িত্ব ডিএসই’র। বিজনেস সম্প্রসারণ করতে হবে। পলিসি মেকারদের সঙ্গে নিয়মিত বসতে হবে। কাজ করতে হবে। এসব করলে মার্কেট ভালো হবে। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে যাবে। আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেলে এসব বাস্তবায়ন করতে পারবো।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন