‘‘বাবা মানে হাজার বিকেল/আমার ছেলে বেলা/বাবা মানে রোজ সকালে/পুতুল পুতুল খেলা। বাবা মানে কাটছে ভালো, যাচ্ছে ভালো দিন, বাবা মানে জমিয়ে রাখা/আমার অনেক ঋণ।’’
বাবা শব্দটি ছোট কিন্তু এর মর্মার্থ অনেক বিস্তৃত। এর মাঝেই লুকিয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা ও দায়িত্ব। তাই প্রত্যেক বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় ‘বিশ্ব বাবা দিবস’।
আজ রোববার, ১৮ জুন ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ববাসী বাবা দিবস হিসেবে পালন করে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন হয়। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই যার শুরু।
১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভার্জিনিয়ার মোনোনগাহ্য় কয়লা খনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩৬২ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। ফলে প্রায় এক হাজার শিশু পিতৃহারা হয়ে পড়ে। পরের বছর ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার এক গির্জায় একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। নিহতদের সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এই প্রার্থনাসভার আয়োজন করে। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন।
বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক নারীর। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস বলে কোনও বিশেষ দিন ছিল না। সে সময় স্থানীয় গির্জায় ডড মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে তিনি ভীষণ অবাক হন। তারপর তিনি বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ডড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা ছিল না তার। মায়ের মৃত্যুর পর শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও তাদের সাত ভাইবোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এই ত্যাগ দেখে ডডের মনে হলো, মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার।
তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস।
ওয়াশিংটন থেকে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এ দিবস পালনের কথা। এরপর ১৯২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলি বাবা দিবসে সম্মতি দেন। তারপর ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস উদযাপনের কথা ঘোষণা করেন। এবং সবশেষে ১৯৭২ সালে তখনকার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি আইনে স্বাক্ষর করে বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেন। তারপর থেকে জুন মাসের তৃতীয় রোববার সারাবিশ্বে বাবা দিবস পালন হয়ে আসছে।
বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এই বিশেষ দিবসে সন্তানরা বাবাদের কোনো না কোনো উপহার দিতে পছন্দ করে। বিশ্বের অনেক দেশে ঘটা করে বাবা দিবস পালন করা হয়। সমাজ, সংস্কৃতি, দেশভেদে বাবা দিবস পালনে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। কোনো দেশে সন্তান বাবাকে ফুলের তোড়া ও কার্ড উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়, আবার কোনো দেশে নেকটাই, টুপি, মোজা ও বিভিন্ন স্পোর্টস সামগ্রী উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বাবারা হলেন সন্তানদের প্রথম ভালোবাসা, জীবনের শেষ নায়ক, যিনি নীরবে সন্তানের শক্তি জোগান। চাইলে বাবার জন্য আজ ছোট্ট একটি গোলাপ, সঙ্গে লাল একটি কেক, অথবা বাবার পছন্দের কোনো খাবার, পোশাক নিয়ে যেতে পারেন। এমনকি বাবাকে নিয়ে ঘুরেও আসতে পারেন তার পছন্দের কোনো জায়গায়। অন্তত বাসায় গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারেন ‘বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি’। বিশেষ এই দিবসে বাবাদের শুভেচ্ছা।
ঢাকা বিজনেস/এম