তরুণদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাইসাইকেলের ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও কার্বন দূষণের অন্যতম বড় একটি কারণ হলো, জ্বালানিচালিত যানবাহন। তাই পরিবেশবান্ধব ব্যক্তিগত যানবাহন হিসেবে বাইসাইকেলের ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা। এছাড়া বাইসাইকেল চালানো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
১৮১৭ সালে জার্মান উদ্ভাবক কার্ল ভন ড্রেইস বাইসাইকেল আবিষ্কার করেন। প্যাডেলবিহীন এই সাইকেলের নাম ছিল ‘সুইফটওয়াকার’। প্যাডেলচালিত বাইসাইকেলের উদ্ভাবক কার্কপ্যাট্রিক ম্যাকমিলান। স্কটিশ এই কামার ১৮৩৯ সালে প্রথম প্যাডেচালিত বাইসাইকেল তৈরি করেন।
সাশ্রয়ী বাহন হিসেবেই পরিচিত হলেও এমনও বাইসাইকেল আছে, যার দাম ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এৈই পর্যন্ত পড়ে হয়তো প্রথমেই কারও মাথায় যে ভাবনা খেলে যাবে, এত দাম দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ির পরিবর্তে কেন কিনবেন এসব বাইসাইকেল? কিন্তু কথায় আছে, ‘শখের দাম লাখ টাকা’। সাইকেলপ্রেমীদের জন্যও ব্যাপারটা ঠিক তেমনই। মজার বিষয় হলো, এই তালিকার বেশিরভাগ সাইকেলই ব্যবহার করেছেন বিশ্বখ্যাত ফ্রেঞ্চ সাইক্লিস্ট ল্যান্স আর্মস্ট্রং।
২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি বাইসাইকেল, ব্র্যান্ড, দাম ও অন্যান্য তথ্য নিয়ে পাঠকদের জন্য সাজানো হয়েছে আজকের আয়োজন।
০১. বেভারলি হিলস এডিশন ২৪ কে গোল্ড এক্সট্রিম মাউন্টেন বাইক
বিশ্বের সবচেয়ে দামি সাইকেলটির দাম ১মিলিয়ন ডলার। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। সাইকেলটির প্রায় সম্পূর্ণ অংশ সোনায় মোড়ানো। এর প্যাডেল ও ব্রেকের রোটোরে ব্যবহৃত হয়েছে খাঁটি ২৪ ক্যারেট গোল্ড প্লেট। আমেরিকার দ্য হাউজ অব সলিড গোল্ড বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাইসাইকেলটি তৈরি করেছে।
সাইকেলটিতে সোনা ছাড়া আর যা যেসব উপাদান রয়েছে, সেগুলো হলো, অ্যালিগেটরের চামড়ার সিট, স্টিং-রে মাছের চামড়ার পানির বোতল ও রেড ইটালিয়ান গোল্ড অ্যাক্সেন্ট দিয়ে বানানো রিম।
সাইকেলটির সামনে ৬০০টি ব্ল্যাক ডায়মন্ড (সর্বমোট ৬ ক্যারেট ওজন) এবং ৫০০টি গোল্ডেন স্যাফায়ার দিয়ে তৈরি করা হয় দ্য হাউজ অব সলিড গোল্ড কোম্পানির লোগো। এই সাইকেলটি দ্য গোল্ড ফ্যাট বাইক নামে বেশি পরিচিত।
০২. ট্রেক বাটারফ্লাই ম্যাডোন
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি বাইসাইকেলটি একটি মহৎ উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের এই বাইসাইকেলটি ২০০৯ সালে ল্যান্স আর্মস্ট্রং ব্যবহার করেন।
এটির কংক্রিট ফ্রেম ও রিমে আসল প্রজাপতির ডানা বসানো হয়েছে, যা প্রাণীদের ওপর বর্বরতার বিরুদ্ধে কাজ করা প্রতিষ্ঠান পেটার নজরে আসে। তারা এই কাজটিকে 'অত্যন্ত বর্বরোচিত' হিসেবে আখ্যায়িত করে।
০৩. ট্রেক ইয়াশিমোতো নারা
জাপানি চিত্রশিল্পী ইয়াশিমোতো নারা এই বাইসাইকেলটিতে বাচ্চাদের চেহারার নেতিবাচক অনুভূতির অভিপ্রকাশের ছবি দিয়ে ডিজাইন করেন। যা ট্রেক কোম্পানির মূল থিম 'চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা' প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, এটিও ল্যান্স আর্মস্ট্রং ট্যুর ডি ফ্রান্সের কোনো এক আসরের ১৮তম স্টেজে চালিয়েছেন। কার্বন ফাইবারে তৈরি সাইকেলটির ফ্রেম ও এর দুর্দান্ত অ্যারোডাইনামিক্সের কারণে এটি সবচেয়ে দ্রুতগতির সাইকেলের মধ্যে একটি। এর মূল্য ২০ লাখ মার্কিন ডলার।
০৪.কস-ট্রেক ম্যাডোন
২০০৯ সালের ভুয়েল্টা লিওন ওয়াই ক্যাসিলা রেসে ল্যান্স আর্মস্ট্রং এই সাইকেলটি ব্যবহার করেন। এটি তার প্রতিদিনের রুটিনমাফিক চালানোর জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু একবছর পরেই 'গ্লোবাল ফাইট এগেইন্সট ক্যান্সার'-এর জন্য ফান্ড তুলতে সাইকেলটি নিলামে ১ লাখ ৬০হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়।
বাইসাইকেল ডিজাইনার ব্রায়ান কনেলি যার ছদ্মনাম 'কস', এর সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেক কোম্পানি এই সাইকেলটি নির্মাণ করে। সাইকেলটির চাকা, রিম ও ফ্রেমে কসের সিগনেচার 'চম্পার' টিথ ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে।
০৫. অরাম্যানিয়া ক্রিস্টাল এডিশন গোল্ড বাইক
ফ্রেঞ্চ কোম্পানি অরাম্যানিয়া ১ লাখ ১৪ হাজার মার্কিন ডলারের এই মনোমুগ্ধকর সাইকেলটি নির্মাণ করে। এর ফ্রেম, স্পোক ও চাকা দু'টি গোল্ড প্লেটেড। এর সঙ্গে বসানো আছে সোয়ারোভস্কি ক্রিস্টালস।
গ্রিপ ও সিট তৈরিতে ব্যবহৃত হয় উচ্চমানের চামড়া। বিলাসবহুল এই সাইকেলটির একদম সামনে একটি চামড়ার ব্যাজে এর লিমিটেড এডিশন, সীমিত সংস্করণের নম্বর লেখা আছে।
০৬. ট্রেক ম্যাডোন ৭-ডায়মন্ড
মাউন্টেন বাইকের মধ্যে দুর্লভ শ্রেণির এই মডেলটি ব্যবহার করে ল্যান্স আর্মস্ট্রং সপ্তমবার ট্যুর ডি ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ৭ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের এই সাইকেল তৈরিতে নাইক, অ্যালান ফ্রিডম্যান এবং লেনি ফিউচুরা একত্রে কাজ করেছিলেন। মূলত ল্যান্স আর্মস্ট্রং যেন চ্যাম্পিয়ন হন, এই লক্ষ্যে এই কোম্পানিগুলো নিজেদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, মেধা ও শ্রম কাজে লাগিয়ে সাইকেলটি তৈরি করে।
রুপালি রঙের সাইকেলটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ৩০৭টি ডায়মন্ড। অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই সাইকেলটিতে ডায়মন্ড-৭ প্লাক রয়েছে, যাতে ১৪ ক্যারেট ইয়েলো ও হোয়াইট গোল্ড রয়েছে। যেখানে ৭১ ক্যারেট ইয়েলো জেমেসিস ডায়মন্ড খচিত রয়েছে।
০৭. ক্রোম হার্টস এক্স কারভেলো মাউন্টেন বাইক
কানাডিয়ান বিখ্যাত রেসিং সাইকেল নির্মানকারী কোম্পানি কারভেলো এই সাইকেলটি বানিয়েছে। ৬০ হাজার মার্কিন ডলার দামের এই সাইকেলে আছে সিলভার ক্রস, সি এইচ মোটিফ প্লাগ, চামড়ার তৈরি সিট ও আর্টওয়ার্ক ফিনিশিং।
সাইকেলটির নজরকাড়া আর্টওয়ার্ক ও অন্যান্যভাবে সুসজ্জিত করার কাজটি করেছে আমেরিকান বিলাসবহুল মোটরসাইকেলের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নির্মাতা ব্র্যান্ড ক্রোম হার্টস।
০৮. মন্টান্তে লাক্সারি গোল্ড কালেকশন
নারীদের জন্য বানানো এই সাইকেলটির বিশেষ কোনো সুবিধা না থাকলেও এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে, এটির পুরো বডিতে সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এতে আছে ১০০০টি সোয়ারোভস্কি পাথর।
এর সিট বানানো হয়েছে চামড়া দিয়ে, যা অত্যন্ত আরামদায়ক। ৪৬ হাজার মার্কিন ডলারের এই সাইকেলটির হ্যান্ডেলে ব্যবহৃত হয়েছে হাতে সেলাই করা অজগর সাপের চামড়া দিয়ে বানানো আকর্ষণীয় গ্রিপ।
০৯.লাইটস্পিড ব্লেড
আমেরিকান দুই কোম্পানি লাইটস্পিড ও মার্লিন যৌথভাবে আশির দশকের শেষের দিকে নির্মাণ করে লাইটস্পিড ব্লেড। এটি অত্যন্ত মজবুত ও টেকসই কিছু বাইসাইকেলের মধ্যে অন্যতম। সাইকেলটির ব্যাকবোন বা ত্রিকোণাকৃতির ফ্রেমটির কিনারাগুলো ছুরির মতো তীক্ষ্ণ করে বানানো হয়েছে।
এই সাইকেলটির সামনে রয়েছে কার্যকরী আকারে বানানো হেড টিউব, যা বাতাসের ধাক্কা কমিয়ে সাইকেলের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া, এই সাইকেলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আছে বিশালাকৃতির ইনার টিউব, টপ টিউব, বটম টিউব ও সিট টিউব। নামকরা ইউরোপিয়ান বাইক কোম্পানিগুলোর একটি ‘এডি মার্ক্স’ ৪০ হাজার ৭৮৮ মার্কিন ডলার মূল্যের এই সাইকেলটি বাজারজাত করে।
১০. অ্যাস্টন মার্টিন ওয়ান-৭৭ সাইকেল
যুক্তরাজ্যের মোটরগাড়ি নির্মানকারী কোম্পানি হিসেবে বিখ্যাত অ্যাস্টন মার্টিন বাজারে আনে অ্যাস্টন মার্টিন ওয়ান-৭৭ বাইসাইকেল। এটির মূল ফ্রেম কার্বন ফাইবারে তৈরি করা হয়েছে। এতে আছে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক। ৩৯হাজার মার্কিন ডলারের এই সাইকেলটি একটি সুপার সাইকেল যাতে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে।
এই সুপার সাইকেল সংযোজন করা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলোর একটি হলো, ‘মোটরস্পোর্ট-ডেরাইভড ডেটা লগিং সিস্টেম’। এই সিস্টেম ব্যবহার করে সাইকেলের গতি, তাপমাত্রা , শ্বাস-প্রশ্বাসের হার, শরীরের তাপমাত্রা ইত্যাদি মাপা যায়, যা ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখা যায়। ব্লুটুথ কানেক্টর সংযুক্ত থাকায় এর সঙ্গে স্মার্টফোন বা অন্য ডিভাইসের কানেক্ট থাকা ও ডেটা আদান-প্রদান করার সুবিধাও রয়েছে।
ঢাকা বিজনেস/এনই/