২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষাবঞ্চিত ৫ শতাধিক শিশু

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ২৩ মে, ২০২৩, ০১:০৫ পিএম
যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষাবঞ্চিত ৫ শতাধিক শিশু বেঙ্গাউতা গ্রামের শিশুদের যেতে হয় ৩ কিলোমিটার দূরের কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নের বেঙ্গাউতা গ্রামে পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে রয়েছে নানা বয়সী ৫ শতাধিক শিশু। কিন্তু  শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য  এই গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, বিদ্যালয় করার জন্য ৩৩ শতাংশ জমির প্রয়োজন। জমি পেলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হবে।

বেঙ্গাউতা গ্রামের বাসিন্দা, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের গ্রামে স্কুল নেই, রাস্তাঘাট নেই। মানুষের চেহারা নিয়ে কেবল বেঁচে আছি। শিক্ষার কারণে আমাদের মধ্যে প্রকৃত মনুষ্যত্ব জাগ্রত হচ্ছে না। জেলার মধ্যে আমাদের গ্রামে সবচেয়ে বেশি নিরক্ষর লোকের বসবাস। এই গ্রামে কোনো শিক্ষিত মানুষ থাকে না।’

বোরহান উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘যাদের অবস্থান একটু ভালো, তারা চলে যায় শহরে। যারা বসবাস করে, তারা সবাই নিরক্ষর। ঝগড়া-বিবাধ নিয়ে কাটে তাদের সময়।’

সরেজমিনে গেছে, নাসিরনগর উপজেলায় ১৩২ গ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৪টিতে। ১৭ গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এর মধ্যে উপজেলার সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বেঙ্গাউতা গ্রাম। এই গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশের গ্রাম কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয়  ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে।

বেঙ্গাউতা গ্রামের মো. আমির বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর কেটে গেলেও আমাদের গ্রামে কোনো প্রাইমারি  স্কুল তৈরি হয়নি। গ্রামে নেই কোনো রাস্তা-ঘাট। পাশের গ্রামে যেতে হয় ফসলি জমির ওপর দিয়ে। কিন্তু বর্ষায় তাও ডুবে যায়। তাই ছয় মাস আমরা কোথাও যেতে পারি না। নৌ-পথ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বর্ষায় শিশুরা পাশের গ্রামের স্কুলে যেতে চায় না।’

চাপরতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনসুর বলেন, ‘বেঙ্গাউতা গ্রামটি যোগাযোগসহ সব সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রয়োজন। দরকার রাস্তা-ঘাটও।’

কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুবনা আক্তার বলেন, ‘বেঙ্গাউতা গ্রামের ৫ শতাধিক শিশু রয়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাট না থাকায় বছরের ৩-৪ মাস শিশুরা স্কুলে আসতো। সম্প্রতি উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে ওই গ্রামের শিশুদের আসা।’

নাসিরনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলায় এমন আরও ১৭টি গ্রাম আছে। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বেঙ্গাউতা গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। বিদ্যালয় করতে ৩৩ শতক জায়াগার প্রয়োজন। জায়গা পেলে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। ওই গ্রামে বিদ্যালয় নির্মাণ করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/




আরো পড়ুন