পাবনার সুজানগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শততম বর্ষ উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনি ও রোববার দুই দিনব্যাপী বিদ্যালয় মাঠে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, সমবেত জাতীয় সংগীত পরিবেশন, পবিত্র গ্রন্থ পাঠ, থিম সং পরিবেশনা, অনুষ্ঠানের সার্বিক দিক তুলে ধরে শুভেচ্ছা বক্তব্য, স্কুলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ওপর নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শন, পরিচিতি পর্ব, নারী-পুরুষ সমন্বয়ে গীতিনৃত্য ও আলেখ্য পরিবেশনা, দলীয় ও ব্যক্তিগত আলাপচারিতা, আতশবাজি, একক ও দলীয় সংগীত পরিবেশন, ম্যাজিক শো ও জলের গান ব্যান্ডের সংগীত পরিবেশনা, লটারি ও ড্র, মরণোত্তর সম্মাননা, স্মারক প্রদান স্মৃতিচারণ বক্তব্য, রম্য ও নাটক প্রদর্শন, শতবার্ষিকীর স্মারক গ্রন্থ প্রকাশনা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন।
সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহবায়ক, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘২০২০ সালে এই শতবর্ষ উদযাপন করার চিন্তাভাবনা থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে সেটি পিছিয়ে এখন করা হচ্ছে। এই শতবর্ষ উদযাপনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে নানা কর্মে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তাদের একত্র করে একটি সুন্দর মিলনমেলার আয়োজন।’ এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ এবং পালন করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির এমপি।
প্রাক্তন ছাত্র প্রকৌশলী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এতটা আনন্দ পাবো, এতটা আনন্দ বহুদিনের চেনাজানা মানুষগুলোকে কাছে পাবো এমন একটি ক্ষণে। এটা ভাবাই যায় না। খুব ভালো লাগছে ১৯৪৬ সালের ব্যাচ থেকে শুরু করে ২০২২ সালের ব্যাচের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে।’
প্রাক্তন ছাত্র জহুরুল ইসলামা ও মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা থেকে এই শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের আসার সময়ে বাসের মধ্যে কয়েকজন মুরুব্বিকে পেয়েছি। তারা বললেন, তোমাদের বাবার আগের ছাত্র আমরা। সেই প্রোগ্রামে আসতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি।’
প্রাক্তন ছাত্র, পাবনা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সামীম হোসেন বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের মাঠে পা দেওয়ার পর মনে হয়েছে আমি আবারও ছাত্র হয়ে গেছি। নতুন পুরান সকলকে একসাথে পেয়ে আসলেই দুইদিন কাটছে ভিন্ন আমেজে। ভিন্ন মজায়। এমন স্মৃতি ধরে রাখতে এমন উদ্যোগ বারে বার গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
আমেরিকা প্রবাসী প্রাক্তন ছাত্র ওহিদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘সুদূর আমেরিকা থেকে ছুঁটে এসেছি এই মিলনমেলাতে সামিল হবো বলে। এসে খুব ভালো লাগছে। পুরনো শিক্ষক, ছাত্র, স্বজনদের কাছে পেয়েছি।’
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা, প্রাক্তন ছাত্র জাহাঙ্গীর কবির রানা বলেন, ‘এই অনুভূতি প্রকাশের নয়। কতটা ভালো লাগছে সেটা বলেই বোঝানো সম্ভব নয়। দেখাতে পারলে ভালো লাগতো। সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বিদ্যালয় গভর্নিং বডির সভাপতি এসকে হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানে শুধু পড়াশুনা করিনি। পরিচালনা কমিটির সাথেও যুক্ত আছি। আসলে কোনো শিক্ষার্থী যদি যে প্রতিষ্ঠানে পড়ে, পড়ান এবং পরিচালনা করেন। সে অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না যে এত ভালো লাগছে।’
প্রধান শিক্ষক একেএম শামসুল আলম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়ে নয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমার শিক্ষার্থীদের কাছে পাবো। এটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। এমন সময় পাওয়া বা দেখা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।’
প্রতিষ্ঠানটির শুরুর পরের নব্বইয়ের ঘরে যাওয়া সাবেক প্রধান শিক্ষক প্রত্যুল কুমার পোদ্দার বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা এটা দেখবার সুযোগ দিয়েছেন বলেই আজ এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরেছি। দেশ বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আমার হাতে তৈরি শিক্ষার্থীদের আদাব, সালাম ও ভালোবাসা পাবো এটা সত্যিই ভাগ্য। ভালো লাগছে যখন আমার প্রিয় ছাত্ররা এসে বলছে স্যার আমি সরকারি জব করি, আমি বেসরকারি জব করি। আমি থাকি বিদেশে। খুব ভালো লাগছে। আমার শরীর আর পারমিট করে না। তবুও এসেছি প্রাণের ছাত্রদের দেখতে। তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের অনুভূতির কথা শুনতে পেরে।’
বিদ্যালয় মাঠকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। উৎসবে যোগ দিতে কয়েকদিন আগে থেকে দেশ-বিদেশ থেকে বিদ্যালয়টির প্রাক্তন ছাত্ররা আসতে শুরু করেন। সরকারের উচ্চ পদস্থসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে সহস্রাধিক ছাত্র। বিদেশের মাটিতে রয়েছেন শত শত ছাত্র। এই অনুষ্ঠানে ৪ হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থীর আয়োজন করা হয়েছে। পুরো সাতবাড়িয়া বাজার ও স্কুল মাঠ সাজানো হয়েছে নানা পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানারে। মাথায় ক্যাপ আর গায়ে টি-শার্টে রাঙিয়েছেন প্রাক্তনেরা।
ঢাকা বিজনেস/এম