সুনামগঞ্জে বোরো ধানের পর এবার জমি থেকে বাদাম তোলার ধুম পড়েছে। চাষি ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকেই এবার ফসলি জমি ছাড়াও পতিত জমিতে বাদাম চাষ করেছেন।
চাষিরা বলছেন, একটু বেলে দোআঁশ মাটি ও উঁচু এলাকায় বাদাম চাষ ভালো হয়। জমিতে সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমলেই গাছ পচে যাবে। বালু মাটিতে অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমান লাভ হয় না। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বাদাম চাষে খরচ কম। তাই বালুতে আমরা সবাই বাদামের চাষ করেছি। বাদাম রোপণের পর অন্য ফসলে ন্যায় কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার। বীজ রোপণ আর পরিপক্ব বাদাম ওঠানোর শ্রমিক খরচ ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই কৃষকদের সারাবছরের সংসার চলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে দুটি মৌসুমে বাদাম চাষ হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে বীজ বপন করা হয়। সে বীজ থেকে তিন মাস পরে বাদাম তোলা হয়। আবার জানুয়ারি মাসে বীজ বপন করে এপ্রিল-মে মাসে বাদাম তোলা হয়। জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ,বিশ্বম্ভরপুর,সুনামগঞ্জ সদরসহ ৬ উপজেলার ৫০ গ্রামে বাদামের চাষ হয়েছে। তৃদানা, বালি, চিনা বাদাম, বিনা ৪, ৮ ও ঢাকা জাতের বাদাম। প্রতি কিয়ারে (৩০শতাংশে এক কিয়ার) বাদাম চাষে খরচ হয়েছে ১০হাজার টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ হাজার টাকা। এবার তিন হাজার আটশত ৪০মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সারও কীটনাশক বিনামূল্যে দেওয়ায় এমন সাফল্য পেয়েছে কৃষক দাবি কৃষি অফিসের।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরে বসে না থেকে গৃহিণীরা ও তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে বাড়ির পাশেই বাদাম ক্ষেতে বাদাম তুলছেন। মাঠজুড়ে সবুজ পাতার সমারোহে প্রখর রোদের মধ্যেই উৎসবমুখর পরিবেশে চাষিরা বাদাম তুলছেন। কেউ বাদামের গাছ তুলছেন কেউ আবার গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে রাখছেন। অনেকেই আবার শখের বসে, বাড়তি আয়ের জন্য,অনেকে আবার নিজেরা খাবারের জন্য বাদাম তুলতে এসেছেন।
বাদাম তুলতে আসা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ঘরে বসে না থেকে সবার সঙ্গে মিলে যে পরিমাণ বাদাম তোলেন, তা জমিয়ে ১০ভাগ করে নয় ভাগ কৃষকের আর এক ভাগ যারা তুলবেন, তাদের দেওয়া হয়। এতে যারা বাদাম তুলছেন, সারাদিন ৪-৫শত টাকার বাদাম পেয়ে যান। আবার কোনো কোনো দিন আরও বেশি। এতে করে ভালোই লাভবান হচ্ছেন সবাই।
বাদাম চাষি শাকিল মিয়া বলেন, ‘একটু নিচু জমিতে বোরো ধান চাষ এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে চাষ করা হয় বাদাম। জানুয়ারি(পৌষ মাসে) বাদাম রোপণ করা হয়। এপ্রিল থেকে মে মাসে বাদাম তোলা হয়। গত মৌসুমে চেয়ে এবার বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। কম পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই গত বছরের তুলনায় এবার অনেক চাষি আগ্রহী হয়ে বোরো ধানের পরিবর্তী সময়ে বাদাম চাষ করেছেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘জেলার গত বছর ১ হাজার ২২৫ হেক্টর বিভিন্ন জাতের বাদামের চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর ১ হাজার ৭০৮ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ছিল চাষ হয়েছে ১ হাজার ৭২৬ হেক্টর। এতে ৩ হাজার ২০০ মেট্রিকটন বাদাম উৎপাদন হবে। এর মূল্য ৩২ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ৫০০ হেক্টর বাদাম তোলা হয়েছে আরও ১৫দিন লাগবে বাদাম তোলা শেষ হতে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/