২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



ব্রাহ্মণাবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল, ধুঁকছে যে-সব সংকটে

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ১৩ এপ্রিল, ২০২৩, ০৪:০৪ পিএম
ব্রাহ্মণাবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল, ধুঁকছে যে-সব সংকটে


ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নানামুখী সংকটে ধুঁকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, এই হাসপাতালে  এক্স-রে ফিল্ম ও প্যাথলজির রিএজেন্টের সংকট রয়েছে। ফলে  প্যাথলজিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের  পরীক্ষা না করিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।  এছাড়া রয়েছে এক্স-রে ফিল্মের সংকটও। 

হাসপাতালের এক্সরে বিভাগের সূত্র জানা গেছে, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল  ডিজিটাল এক্স-রের জন্য ১ হাজার ৮০০ ও নরমাল এক্সরের জন্য ১ হাজার ৮০০ ফিল্ম নিয়ে ৩ হাজার ৬০০ ফিল্ম দিয়েছে।  আগের তুলনায় রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকার কারণে এক্স-রের ফিল্মগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। চলতি এপ্রিল মাসের ১০ থেকে ১২ দিন হাসপাতালে থাকা ফিল্মের মাধ্যমে এক্সরে চলবে। আর এগুলো শেষ হয়ে গেলে  এক্স-রে বিভাগ দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার আশঙ্কা রয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, সরকারি হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ১১৪ টি ডিজিটাল এবং ১২ টি নরমাল এক্সরে করানো হয়। আর তার জন্য রোগীদের ডিজিটাল এক্সরের জন্য ২২০ টাকা এবং নরমাল ৭০ টাকা জমা দিতে হয়। আর এই ডিজিটাল এক্সরে যেকোনো একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করাতে রোগীদের ৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্তও খরচ করতে হয়।

প্রশাসনিক শাখা-সূত্রে জানা গেছে, সরকারি এই হাসপাতালটিতে প্রতিবছর এক্স-রের বিভাগ থেকে আশানুরূপ আয় হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে হাসপাতালটি নরমাল এক্স-রে থেকে আয় করেছে ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৫ টাকা। তখন ডিজিটাল এক্স-রে ছিল না। তাই চলতি বছরের মার্চ মাসে সরকারি এই হাসপাতালটি থেকে ডিজিটাল ও নরমাল এক্সরে মিলিয়ে ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকার এক্সরে করানো হয়েছে। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে গত বছরের জুলাই মাসে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬০ টাকা, আগস্ট মাসে ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ টাকা, অক্টোবর মাসে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৩০ টাকা, নভেম্বর মাসে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩০ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮০ টাকা, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয় করেছে  হাসপাতাল। 

সরেজিমনে দেখা গেছে, শুধু এক্স-রে’র ফিল্ম সংকট নয়, মেশিনগুলোতে রয়েছে ত্রুটিও। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের বাতি ঠিকভাবে কাজ করে না, একবার জ্বলে তো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। 

এক্স-রে বিভাগের দায়িত্বে থাকা রেডিওলোজিস্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে দেওয়া এক্স-রের জন্য ফিল্ম শেষের পথে। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিছুদিন পরই বাকি  এক্স-রে ফিল্মগুলো শেষ হয়ে গেলে পুনরায় না আনা পর্যন্ত পরীক্ষা করানো যাবে না।  ১ মাস যাবৎ নরমাল এক্স-রে মেশিনের লিস্টেম মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে ডিজিটাল এক্স-রে ওপর চাপ পড়ছে।’

এদিকে হাসপাতালটি শুধু এক্স-রে ফিল্ম নয়, প্যাথলজি বিভাগের রিএজেন্টেরও সংকট রয়েছে।  ২ মাস ধরে হাসপাতালটিতে রিএজেন্ট না থাকার কারণে ওয়াডাল টেস্ট (টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা), এইচবিএওয়ানসি (ডায়াবেটিস গড় মাপার পরীক্ষা) ও বিলোরোবি (জন্ডিস) যাচাই করতে পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। তবে হাসপাতালে পরীক্ষাগুলো না করানো কারণে রোগীরে বাইরে থেকে এই পরীক্ষাগুলো করানো হচ্ছে। এতে স্বল্প আয়ের রোগীদের আর্থিক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. রানা নূর শামস্ বলেন, ‘আগামী অর্থ বছরের আগে আমাদের কোনো বাজেট নেই। হাসপাতালে যে পরিমাণ এক্সরে ফিল্ম রয়েছে, সেগুলো দিয়ে একমাস  চালিয়ে যাওয়া যাবে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা পরিষদে চাহিদা পত্র পাঠিয়েছি।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/ 



আরো পড়ুন