সুনামগঞ্জের সর্ববৃহৎ শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত তাহিরপুর উপজেলার ছোট বড় ২৩ হাওরের বিস্তীর্ণ জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু পুরোপুরি পাকার আগেই ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কৃষকের হাসি মাখা মুখ মলিন হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার শনি, মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওর সহ বেশ কয়েকটি হাওরে ব্রি-ধান ২৮ জাতের পাকা বোরো ধান ক্ষেতের শীষে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৮০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ২৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ধান উৎপাদনের দিক থেকে তাহিরপুর উপজেলা শীর্ষে রয়েছে।
কৃষকরা বলছে, সপ্তাহ-দশ দিনের মধ্যেই ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধান কাটা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
শনির হাওরের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার এক একর ব্রি-ধান ২৮ ধানের জমিতে নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জমির পাকা ধান গাছ চোখের সামনে মরে যাচ্ছে। সারাবছরের উপার্জন শেষ হয়ে গেছে।’
মাটিয়ান হাওরের কৃষক তোফায়েল মিয়া বলেন, ‘মাটিয়ান হাওরে আমার দুই একর জমিতে এ রোগ দেখা দিয়ে দিয়েছে। জমিতে ধান গাছগুলো মরে খড় হয়ে গেছে। ধান গাছ কেটে আর বাড়িতে আনতে হবে না। এখন পথে বসতে হবে আমাদের।’
কৃষক সামিউল মিয়া ও আতিক রহমান বলেন, ‘হাওরে জমিতে ওই রোগ দেখা দেওয়ায় বছরের একমাত্র বোরো ফসল ঘরে তুলতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। ওই রোগে আমাদের জমির ধান সব শেষ করে ফেলেছে।’
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘নেক ব্লাস্ট রোগের সৃষ্টি হয় রাতে কুয়াশা, দিনে গরম এবং রাতে শীত, গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি থেকে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ-দৌলা বলেন, ‘ব্রি-২৮ জাতের পাকা বোরো ধানের নেক ব্লাস্ট রোগ ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। রোগ প্রতিকারের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে।’
এই কর্মকর্তার অভিযোগ, ‘চলতি বছর কৃষকরা ব্রি ২৮ জাতের ধান জমিতে না করার জন্য জমি চাষের আগেই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে লিফলেট বিতরণসহ পরার্মশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা কথা শোনেনি।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/