২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



রাজশাহী শিশু হাসপাতাল চালুর আশা জুনে

ফেরদৌস সিদ্দিকী, রাজশাহী || ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১০:০৩ এএম
রাজশাহী শিশু হাসপাতাল চালুর আশা জুনে রাজশাহী শিশু হাসপাতাল


রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজ আগামী মে মাসের মধ্যেই শেষ হচ্ছে। এরপর জুন মাসেই ২০০ শয্যার এই হাসপাতালটি চালুর আশা করছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটি চালু হলে পুরো অঞ্চলের শিশু চিকিৎসায় গতি আসবে।  

জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী সফরে এসে আরও ২৪ প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রকল্পটিরও উদ্বোধর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় সীমানা প্রচীর এবং ভেতরের রাস্তাসহ কিছু কাজ বাঁকি ছিল। সেগুলো এখন জোরেশোরে চলছে। 

নগরীর বহরমপুর এলাকার ২ দশমিক ৪৪ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে বিশেষায়িত এই হাসপাতাল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১০ তলা ভীতবিশিষ্ট ৪ তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ। এখন বাকি রঙের কাজ। সামনের রাস্তা নির্মাণ চলছে। সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশ বাকি। সিটি করপোরেশনের পুকুর সংস্কার কাজ চলমান থাকায় সেটি আটকে আছে। একই কারণে আটকে আছে রাস্তার কাজও। 

রাজশাহী গণপূর্ত দপ্তরের তথ্যমতে, হাসপাতালটির প্রথম তলার আয়তন ১৯ হাজার বর্গফুট। এই তলায় থাকছে ১৪ শয্যার জেনারেল অবজারভেশন ইউনিট। এছাড়া এক্স-রের জন্য দুটি এবং সিটি স্ক্যান ও এমআরআই এর জন্য একটি করে কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্টোর হিসেবে থাকছে ৮টি কক্ষ। এই তলায় থাকছে পার্কিং ব্যবস্থা। সেখানে একসঙ্গে ২০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। 

দ্বিতীয় তলার আয়তন ২০ হাজার ২২৫ বর্গফুট। এই তলায় থাকছে একটি মাইনর ওটি। বিশেষায়িত ওটি থাকছে আরও ৪টি। এ ছাড়া ১০ শয্যার প্রি ও পোস্ট ওটিও থাকছে। ৫৬ শয্যার আইসিউই ইউনিট থাকছে দ্বিতীয় তলায়। 

১৮টি কক্ষ রাখা হয়েছে আউটডোর চিকিৎসকদের জন্য। আরও থাকছে ক্যান্টিন, ল্যাব ও অফিস ব্লক। চতুর্থ তলায় থাকছে ৯৬ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৮ শয্যার পেয়িং শয্যা।

জানা যায়, কেবল হাসপাতাল ভবন নির্মাণেই ব্যয় প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে জেনারেটর ও সাব স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। শীতাপত নিয়ন্ত্রক, সোলার প্যানেল এবং অগ্নি নির্বাপন সামগ্রী বসানো হয়েছে আরও দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে।

এছাড়া সাব-স্টেশন এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার নির্মাণ হয়েছে ১ কোটি টাকায়। ২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে দুটি লিফ্ট বসাতেই। হাসপাতালজুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ লাইন বসাতে ব্যয় হয়েছে আরও দুই কোটি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের মে মাসে হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসেন এন্টারপ্রাইজ। শুরুতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের হিসেবে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। 

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তা শেষ না হওয়ায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন সময় দেওয়া হয়। তৃতীয় ধাপে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় সময় বাড়ায় নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, হাসপাতালটির জন্য নির্ধারিত স্থানে পুরনো ভবন ছিল। সেগুলো অপসারণে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। নির্মাণ কাজ শুরুর পর দেখা দেয় নকশা জটিলতা। শুরুতে ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা চার তলায় নেমে আসে। ভবনটা ছিল ১৬ হাজার স্কয়ার ফিট। এটি পরিবর্তন করে হয়ে যায় প্রায় ২৭ হাজার স্কয়ার ফিট। এই কারণে নির্মাণ কাজ শেষ করতে বাড়তি সময় লেগে যায়।

হাসপাতালের নির্মাণ কাজ তদারকি করছে রাজশাহী গণপূর্ত জোন-২। সংস্থাটির উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম শুরু থেকেই দায়িত্বপালন করছেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে পুরনো ভবন ভাঙতে কিছুটা দেরি হওয়ায় সময়মতো আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হোসেন এন্টারপ্রাইজকে সাইট বুঝিয়ে দিতে পারিনি। মাঝে নকশা জটিলতা দেখা দেয়। পূর্ত নকশা পেতে বিলম্ব হওয়ায় থমকে যায় নির্মাণ কাজ। ফলে কাজ সময়মতো শেষ করা যায়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখন কেবল সীমানা প্রাচীর এবং সামনের রাস্তা নির্মাণ বাকি আছে। সেগুলো শেষ করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আশা করছি দ্রুতই শেষ হবে।’

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। এখন টুকিটাকি কাজ বাকি। সেগুলো শেষ করতে আর মাস দুয়েক সময় লাগবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী মে মাসেই হাসপাতালটি কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা যাবে।’ 

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন