আবারো ডিমের দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা। তাদের আশঙ্কা, এখনই ডিমের দামের লাগাম টেনে না ধরলে অচিরেই নিম্নবিত্ত-মধ্যভিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাস আগে হঠাৎ-ই ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। ওই সময় প্রতি ডজন ডিম কিনতে ভোক্তাদের গুনতে হয়েছে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা। এই বেগতিক অবস্থা দেখে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দেয় ব্যবসায়ীদের। পরবর্তী সময়ে বিদেশ থেকে ডিম আমদানির একচালান বাজারে আসা মাত্রই পণ্যটির দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। সম্প্রতি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডিম মজুদ করে আবারও এর দাম বাড়াতে শুরু করেছে। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের বাজেটে।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও ফার্মের মুরগির লাল প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। আর এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। আর ফার্মের মুরগির সাদা প্রতি ডজন এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডজন প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাস আগে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ১৫ কোটি ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় প্রথম চালানে আনুমানিক ৬৩ হাজার ডিম বাজারে আসে। এরপর স্বাভাবিক হতে থাকে ডিমের বাজার। এরপর এমন পরিস্থিতি হয় যে আমদানি করা ডিমের চেয়ে দেশে উৎপাদিত ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম কমে যায়। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা ডিম আমদানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আবারও অসাধু ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়াতে শুরু করেছে।
কাওরানবাজারের ডিম বিক্রেতা মো. রাসেল জানান, ‘এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা বেশি দাম দিয়ে ডিম কিনে নিয়ে আসি। তাই বেশি দামে বিক্রি করি। কেন ডিমের দাম বাড়ছে; তা জানি না।’
ক্রেতারা বলছেন, ডিমের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বাজার নিয়ন্ত্রকরা ডিমের দামের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না। সাধারণ মানুষের বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে ডিমের দাম।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সরকারি সংস্থাগুলোর অভিযান অকার্যকর হয়ে পড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের ধরে বা শাস্তি দিয়ে লাভ নেই। যেকোনো পণ্যের সাপ্লাই চেইনের গোড়ায় গিয়ে ধরতে হবে। গোড়াতে যদি বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে, তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করবে, এটাই স্বাভাবিক। হোলসেল মার্কেটগুলোতে কঠোরভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবেই শুধু ডিম নয়; সবপণ্যেরই দাম কমে আসবে।’
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমরা জানতে পেরেছি ডিমের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। আজকে আমরা ছুটিতে আছি। আগামীকাল থেকে আবারও ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তখন আমরা ডিমের বিষয়টিও অভিযান লিস্টে রাখবো।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবাসায়ী আবারও ডিমের দাম বাড়াচ্ছে। ভোক্তা অধিকার দিয়ে অভিযান পরিচালনা করাতে হবে। ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
/ঢাকা বিজনেস/এনই/