২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



জানা-অজানা
প্রিন্ট

পিঁপড়ার ঘুম কেমন

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ১২ মার্চ, ২০২৩, ০৫:৩৩ পিএম
পিঁপড়ার ঘুম কেমন


সারাদিন আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো ছোট্ট  একটি প্রাণী পিঁপড়া। কিন্তু পিঁপড়া সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। তবে, পিঁপড়ার অজানা সব তথ্য জানলে নিশ্চয় অবাক হবেন। 

পিঁপড়ার ফুসফুস নেই।  হাঁটু ও পায়ে আছে বিশেষ ধরনের সেনসিং ভাইব্রেসন; যার মাধ্যমে আশেপাশের পরিস্থিতি বুঝতে পারে এরা।

পোকামাকড়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী হলো এই পিঁপড়া। অধিক পরিশ্রমীও বটে। মানবজাতি পরিশ্রমের পর বিশ্রাম নেয়। টানা ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে মানুষ ক্লান্তি দূর করে। কিন্তু, পরিশ্রমী প্রাণী পিঁপড়া নাকি ঘুমায় না!তবে কি অধিক ব্যস্ততার জন্য ঘুমায় না এই প্রাণী? না কি রয়েছে অন্য কোনো কারণ? বিজ্ঞানই বা কী বলে? চলুন, জেনে নেই। 

ঘুম না হওয়ার কারণ? 

পিঁপড়ার চোখের পাতা নেই। তাই এরা চোখ বন্ধ করতে পারে না। তবে তার জন্য এদের দেখতে কোনো সমস্যা হয় না। পিঁপড়ার দুটি চোখ থাকে। এতে কয়েকটি লেন্স থাকে যার সাহায্যে এরা খুব ভালো দেখতে পায়। ঘুম মানেই চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকা নয়। আমাদের চোখের পাতা আছে। তাই আমরা চোখ বন্ধ করে ঘুমাই। পিঁপড়াও ঘুমায়। তবে আমাদের মতো চোখ বন্ধ করে নয়। তাদের ঘুমকে গভীর বিশ্রামের সঙ্গে তুলনা করা যায়। পিঁপড়ার ঘুম নিয়ে গবেষণা পর্যন্ত হয়ে গেছে।

১৯৮৩ সালে জেমস ও কোটেল পিঁপড়ার গভীর বিশ্রাম নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণায় পিঁপড়ের বিশ্রামদশার অনেকগুলো ক্রম পাওয়া যায়। কিছু পিঁপড়া যখন বিশ্রাম নিতে থাকে তখন অন্য পিঁপড়া তাদের বাসস্থানের দেখভালের পুরো দায়িত্ব পালন করে। আর বিশ্রাম চলাকালে পিঁপড়ার ম্যান্ডিবল ও অ্যান্টেনার সঞ্চালন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ কমে যায়। তাই এই দশাকে তারা গভীর বিশ্রাম দশা নাম দেন।

১৯৮৬ সালে বেইসিং ও ম্যাক্লাস্কি পিঁপড়ার ছোটখাটো মস্তিষ্কের কার্যকারিতার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণায় জানান, পিঁপড়ার গভীর বিশ্রামদশাই প্রচলিত অর্থে ঘুম।

২০০৯ সালে ডিভন সুইক, ডেবি কেসিল, জর্জ ইয়ানেভ ও স্কাই ব্রাউনসহ কয়েকজন গবেষক পিঁপড়ার ঘুম নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তাদের গবেষণা অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়ার ঘুম বিভিন্ন রকমের হয়। লাল পিঁপড়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন তারা।

মানুষ যেমন একবারে ৮/৯ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে, পিঁপড়া সেভাবে ঘুমায় না। তাদের ঘুম ছোট ছোট পর্বে বিভক্ত।

কর্মী পিঁপড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৫০ বারের মতো ঘুমায়। আর প্রতিবার তারা মাত্র ১ মিনিটেরও কম সময় ঘুমিয়ে থাকে। সবমিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় একটি কর্মী পিঁপড়া সাড়ে ৪ ঘণ্টার মতো ঘুমাতে পারে। তারা কখনোই একসঙ্গে সবাই ঘুমায় না, অন্তত ৮০% পিঁপড়া জেগে থাকে। কিছু পিঁপড়া যখন বিশ্রামে যায় তখন পর্যাপ্ত সংখ্যক পিঁপড়া জেগে থাকে প্রতিরক্ষা কিংবা কাজের জন্য।

অন্যদিকে, রানি পিঁপড়া একটু অলস প্রকৃতির। যদিও তারা ২৪ ঘণ্টায় ৯০ বারের মতো ঘুমায়, কিন্তু প্রতিবারে প্রায় ৬ মিনিটের মতো সময় নেয়। সবমিলিয়ে রানি পিঁপড়া ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৯ ঘণ্টার মতো ঘুমায়।

রানি পিঁপড়া আমাদের সমপরিমাণ ঘুমালেও একটানা ঘুমায় না। মজার বিষয় হলো, একটি কলোনিতে একাধিক রানি পিঁপড়া থাকলে তারা ঘুমানোর সময় একসঙ্গেই ঘুমায়। একরকম জড়াজড়ি করে। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার পর তারা আলাদা হয়ে পড়ে।

ডেবি কেসিল এর মতে, রানি পিঁপড়ারা মাঝে মধ্যে মুখ খুলে ও অ্যান্টেনা পাশের দিকে রেখে ঘুমায়। আবার অনেক সময় মুখ বন্ধ করে ঘুমায়। অ্যান্টেনা সোজা থাকে। এটাই এদের গভীর বিশ্রাম দশা।

সদ্য জেগে ওঠা থেকে ওঠা পিঁপড়া কিছু সময় ঢিলে তালে চলাফেরা করে। এই বিষয়টি আমাদের সঙ্গে বেশ মিলে যায়।

ঢাকা বিজনেস/এন/ 



আরো পড়ুন