২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



জানা-অজানা
প্রিন্ট

বিশাল ভাসমান শহর বানাচ্ছে সৌদি আরব

আব্দুল্লাহ আল ইসমাইল || ০৯ জুন, ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম
বিশাল ভাসমান শহর বানাচ্ছে সৌদি আরব


মধ্যপ্রাচ্য যেনো বদলে দিচ্ছে পুরো দুনিয়াকে। বিশ্বের সেরা সব স্থাপনা, সেরা আইডিয়া; সব মিলিয়ে দুনিয়ার তাবৎ লোকের দৃষ্টি কাড়ছে মধ্যপ্রাচ্য। এতদিন সৌদি আরব রক্ষণশীল ধারায় চললেও এবার তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল এবং সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী বানাচ্ছে সৌদি আরব। যদিও এটা শুধু প্রমোদ তরী নয়, বলা চলে ভাসমান এক শহর। কচ্ছপের আদলে তৈরি এই ভাসমান শহরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্যাংগোস’। 

সাগরের পানির ওপর তৈরি হচ্ছে শহরের মতো একটি ভাসমান নৌকা। এর নকশা দেখলে অবিশ্বাস্য লাগবে, যা আগে কেউ কখনো ভাবেনি। যাকে ফ্লোটিং সিটি বা ভাসমান নগর বলা হচ্ছে। 

চোখের সামনে বুর্জ আল খলিফা, বুর্জ আল আরব, পাম জুমেরাহরা মতো স্থাপনা করছে ছোট্ট দেশ আরব আমিরাত; দুবাই যেখানে সারা দুনিয়ার কেন্দ্র হয়ে উঠছে; সে তুলনায় পিছিয়ে সৌদি আরব। এবার তাদের ঘুম ভেঙেছে। এজন্য তারা এরকম ভাসমান সিটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই সিটি বানানোর জন্য সৌদি সরকার খরচ করছে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

ফ্লোটিং সিটি হবে একটি কচ্ছপের আকৃতির। যেটি পানির ওপর সব সময় ভাসতে থাকবে। কিন্তু এই শহরটির জন্য যে নকশা করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, এটি আসলে একটি বিশাল পাঁচতারকা হোটেলের মতো। যার নাম রাখা হয়েছে ‘PANGOES’। টাইটানিক বা বিশাল বিলাসবহুল ক্রুজের মতো হবে এটি। 

প্যাংগোস তৈরির পেছনে কিছু কারণ খুঁজে দেখছে সৌদি আরব। যেমন বেশ কিছু বছর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে তেল ও গ্যাসের ব্যবহার কমছে। পরিবেশের ক্ষতি চিন্তা করে অতি সচেতন কিছু মানুষ তেল-গ্যাস ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। আবার এই তেল-গ্যাস এক সময় শেষ হয়ে যাবে। এগুলোকে বলা হয় লিমিটেড রিসোর্সেস। সবাই জানি, সৌদি আরবের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রেখেছে তেল ও গ্যাস। তেল-গ্যাসের ব্যবহার কমে গেলে তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিকল্প জ্বালানি তৈরি হয়ে গেলে তেল-গ্যাস সে-রকম কোনো কাজেও আসবে না হয়তো। এজন্য তারা বিকল্প আয়ের উৎস ভাবছে। 

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো পর্যটনকে আয়ের একটি বড় উৎস হিসেবে দেখছে। এ কারণে টুরিজমকে লক্ষ্য করে তারা বিশাল সব প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফা, বুর্জ আল আরব, মিরাকল গার্ডেন এরকম অসংখ্য প্রজেক্ট রয়েছে। সবাই জানি, সেগুলো দারুণ ব্যবসা সফল। পশ্চিমা বিশ্বকে আকৃষ্ট করতে আরব আমিরাত পাম-জুমেরা ও মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচারসহ আরও কিছু আকর্ষণীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। 

অন্যদিকে কাতার ট্যুরিস্ট আকৃষ্ট করতে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল। এ থেকে তারা ব্যাপক মুনাফাও করেছে। এ বিষয়গুলো আকৃষ্ট করেছে সৌদি আরবকে। এজন্য তারা ভাসমান শহর বা ফ্লোটিং সিটির মতো মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।

অন্য সব জাহাজ বা ভাসমান সিটি থেকে একেবারেই আলাদা হতে চলেছে প্যাংগোস। ভাসমান প্যাংগোস আসলে একটি বিশাল বিলাসবহুল হোটেল। যেখানে একসঙ্গে ৬০ হাজার মানুষ আরামে বসবাস করতে পারবে। যেখানে থাকবে ৬৪ অ্যাপার্টমেন্ট, ৪০টি বিলাসবহুল ভিলা (আরবীয় শৈলীতে নির্মিত বাড়ি)। নির্মাণাধীন শহরের কাজ কবে শেষ হবে, তা নিয়ে তর সইছে না অনেকেরই। ওখানে থাকার জন্য ধনী ব্যক্তিরা অপক্ষায় রয়েছেন। অবস্থা এরকম যে, টাকা কোনো সমস্যা নয়; কবে বুকিং পাওয়া যাবে তাই বলেন! তবে কাজ কবে শেষ হবে সে বিষয়টি এখনো প্রকাশ করেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। কয়েক বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে অনেকের ধারণা। 

এই শহরটি দেখতে যতটা সুন্দর হবে তার চেয়েও বেশি এই শহরটি এক্সপেনসিভ বা দামি হবে। যারা শুধু  সুপার ধনী, ধনীর চেয়েও ধনী; তারাই এই শহরে বসবাস করতে পারবেন। সবার কাছেই এটি একটি স্বপ্নের প্রকল্প। এই শহরে শুধু অ্যাপার্টমেন্ট ও ভিলা থাকবে না, সঙ্গে থাকবে লাক্সারিয়াস হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। 

প্যাংগোসে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকছে, যাতে কোনো প্রয়োজনে এখানকার বসবাসকারীদের বা বোর্ডারদের এর বাইরে যেতে না হয়। এই শহরে মানুষের যাতায়াতের জন্য বড় বড় ইয়টের পাশাপাশি থাকবে এয়ারক্রাফট বা বিমান, হেলিকপ্টার। 

/ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন