নিজেকে সবসময়ই সৌভাগ্যবান মনে করি। জীবন চলার পথে এমন কিছু মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি, যা অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়। যাঁদের এককথায় ‘আলোর মানুষ’ অভিহিত করি। তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য অনীক মাহমুদ। আমার শিক্ষক। একেবারে সহজ সরল সাদাসিধে একজন মানুষ। দামি ফলভারে মাটিতে নুয়ে থাকা গাছের মতো। বরেণ্য অধ্যাপক, কবি-কথাশিল্পী-প্রাবন্ধিক-গবেষক। বহু গুণে গুণান্বিত মহীরূহ। আমার মতো সাধারণ এক ছাত্রকে পুত্রসম স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। পরম ভাগ্য আমার।
আমার লেখালেখি নিয়ে তিনি লিখেছেন-বিভিন্ন সময়ে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। আমাকে তিনি ‘কান্তবোধি কবিতিকা’ কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেছেন। এ আমার অপার বিস্ময়! এই তো কিছুদিন আগে আমার ‘অগ্নিকা আঁধার’ উপন্যাস সম্পর্কে লিখলেন দৈনিক যুগান্তরে। ভাবতেও আকাশ আকাশ দূরে তাকাতে হয়। এও কি সম্ভব ? হ্যাঁ, সম্ভব । যদি শিক্ষক হন অনীক মাহমুদ।
সদ্য সমাপ্ত বইমেলা থেকে সংগ্রহ করেছি স্যারের লেখা ‘শিল্প সাহিত্যের মর্মলোক’ প্রবন্ধ গ্রন্থ। বইটি হাতে নিয়েও ভাবিনি আমার জন্য কী অপার এক বিস্ময় ও আনন্দ অপেক্ষা করছে। স্যার ভুলেও আগে কখনো বলেননি, এ বইয়ে আমার ‘পথের কথা’ প্রবন্ধগ্রন্থ ও ‘দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত’ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে মূল্যায়নধর্মী দীর্ঘ প্রবন্ধ রয়েছে। বইটির সূচিপত্র দেখতেই আঁতকে ওঠার মতো অবস্থা আমার। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, আবদুল হক, বাংলা মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস, কাব্যের গবেষণা, শামসুর রাহমানের কবিত্ব, লায়েক আলী খাঁনের এজিদের কবিতা, ফজলুল হকের গান, সাহিত্যশিল্পী মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল, আতাউর রহমানের কবিতা, কবি মিলু শামস-র ‘নিরুপায় বৃত্ত’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিচর্চা- এতসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে আমার সাহিত্যকর্ম নিয়ে স্যার প্রবন্ধ লিখে তাঁর মূল্যবান এ গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। আমি বিস্ময়ে হতবাক । অভিভূত। আপ্লুত।
কিভাবে পরম শ্রদ্ধাভাজন স্যারকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানালে যথাযথ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানো হবে জানা নেই আমার। অনীক মাহমুদ স্যারকে শুধু এটুকু বলতে পারি, স্যার, পিতৃঋণ যেমন কোনোকালেই কোনোভাবেই পরিশোধ করা যায় না, আপনার কাছেও আমার ঋণ অনুরূপ। অতল শ্রদ্ধা, স্যার।