প্লাস্টিক বর্জ্যে দিনে দিনে পরিবেশদূষণ বেড়েই চলেছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য শুধু পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর নয়,মানবদেহের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই বর্জ্য মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। পচেও না। তাই প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। সিংগেল পাতলা প্লাস্টিক বা পলিথিন বন্ধের জন্য পরিবেশষ অধিদপ্তর তিন বছর মেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে মাল্টি সেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান করা হয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যাবে।
বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্যের যে অবস্থাপনা রয়েছে, তার জন্য আমরা নিজেরা অনেকাংশে দায়ী। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ইথিলিন ও মিথেনের মতো ক্ষতিকর সৃষ্টি হয়। বর্জ্য গিয়ে পড়ে জলাশয়, ভাগাড়, সমুদ্রসৈকতে। ফলে জলাশয়-ভাগাড়-সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্লাস্টিক-পলিথিনের ব্যবহার যতই বাড়ছে, এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ততই নিম্নগামী হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন কতটা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাদের মতে, প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনায় আসতে পারে আমূল পরিবর্তন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-এর নির্বাহী পরিচালক ও পরিবেশবিদ সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব নয়। যাদের কারণে প্লাস্টিক বর্জ্যের সৃষ্টি হচ্ছে এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের সমুদ্র হচ্ছে প্লাস্টিক-পলিথিনের কারণে দূষিত সমুদ্রের মধ্যে বিশ্বের দশটির মধ্যে ৯ নম্বর। পলিথিন-প্লাস্টিকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সমুদ্রসৈকতে যেন কেউ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। কোম্পানিগুলো যখন প্লাস্টিকের বোতলজাত পণ্য বিক্রি করবে, তখন কিছু টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করবে ক্রেতাদের কাছে। ক্রেতারা বোতলজাত পণ্যের ব্যবহার শেষ হলে সেই খালি বোতলগুলো বিক্রেতার কাছে ফেরত দেবে। ফেরত নেওয়ার সময় ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকাটা ফেরত দেবে। এরপর সেই খালিবোতলগুলো পরিবেশ সম্মতভাবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে হবে।’
বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির সচিব মো. মেহেদি হাসান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সবার আগে দরকার রিসাইক্লিংয়ের প্রতি জোর দেওয়া। পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্যে পুড়িয়ে ফেলতে হবে পরিবেশ সম্মতভাবে। আমাদের সমিতি পলিথিন ব্যবসায়ীদের এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনা) ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সিংগেল-পাতলা প্লাস্টিক ও পলিথিন বন্ধে তিনবছর মেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছি। পলিথিন-প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্লাস্টিক তো একটি পুরনো ইস্যু। কিছুদিন আগে জব্দ করা ১০০০ টন পলিথিন রিসাইক্লাদের কাছে বিক্রি করেছি।’
ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে। এটি এমন প্লাস্টিক, যা পচে যায়। বিশেষত যে সব প্যাকেজিং জৈব বর্জ্য থেকে সহজে পৃথক করা যায় না, সেখনে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহার করে সমাধান সম্ভব। তাই বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/