১৮ মে ২০২৫, রবিবার



নয়নাভিরাম সীতাকুণ্ডে একদিন

ভ্রমণ ডেস্ক || ১৩ মে, ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
নয়নাভিরাম সীতাকুণ্ডে একদিন


আমরা যাবো সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও গুলিয়াখালী বিচ। শুরু হলো প্রস্তুতি। দিনক্ষণ ঠিক করে ফেললাম। আমরা অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে যাবো। আনন্দভ্রমণে না গেলে কেমন হয়? আমরা প্রস্তুতি মিটিং সেরে নিলাম। আনন্দভ্রমণের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন শুধু ভ্রমণের পালা।

নাস্তা করে সবাই চলে গেল টাইগারপাসে। সেখানে গাড়ি আছে। বাস এলো সাড়ে ৭টায়। মনোরম দৃশ্য দেখতে সবাই প্রস্তুত। মন তাড়া দিচ্ছে কখন পৌঁছাবো চন্দ্রনাথে। সাড়ে ৮টায় গাড়ি ছেড়ে রওয়ানা হয়ে গেলাম সবুজে ঢাকা চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ পাহাড়ের দিকে। সবাই গানে গানে মুখরিত। সবার মুখে আনন্দের ছাপ। একজনের পর একজন গান গাইতে লাগল। কত হইহুল্লোড়।

ঠিক সাড়ে ৯টার দিকে চন্দ্রনাথে পৌঁছে গেলাম। ১২০০ ফুট উচ্চতার চন্দ্রনাথের সামনে। আমরা খাবার অর্ডার দিয়ে এলাম হোটেলে। সবাইকে নাস্তা দেওয়া হলো। কেউ কেউ চন্দ্রনাথে ওঠার জন্য লাঠি নিলো। একটি চ্যালেঞ্জের যাত্রা। পাড়ি দিতে হবে ২২০০ সিঁড়ি। কিছু কিছু বিপজ্জনক সিঁড়ি আছে। সবাই ওঠা শুরু করতে করতে ঘেমে যাচ্ছে।

১৫ মিনিট হাঁটার পর একটি ছোট ঝরনা আছে। যার দুইদিকে দুইটি পথ যা দিয়ে ওঠা যাবে পাহাড়ের চূড়ায়। বামপাশেরটা দিয়ে ওঠা সহজ, ডানপাশেরটা দিয়ে নামা সহজ। আমরা বামপাশেরটা দিয়ে ওঠা শুরু করলাম। উঁচু-নিচু বাঁকা পথ বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। কেউ কেউ অপরূপ সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দি করছে। অর্ধেক উঠেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। কেউবা ঠান্ডা পানি পান করছে। কেউ পান করছে ঠান্ডা শরবত বা জুস।

উঠতে উঠতে হালকা বাতাস শুরু হলো। কতই না শান্তি লাগছে। পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কী অপরূপ দৃশ্য। উঠতে উঠতে সবাই বুঝতে পারছে ট্রেকিংটা এত সহজ নয়। কিন্তু যখন ওপরে উঠল সবাই, কী করবে বুঝতে পারছে না। এত সুন্দর দৃশ্য কীভাবে থাকতে পারে। পাহাড়ের কোনো কোনো অংশে মন্দির দেখা যাচ্ছে।

সীতাকুণ্ড পাহাড় হিমালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ। পাহাড়টি হিমালয়ের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক ঘুরে ভারতের আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের সাথে মিশেছে। চট্টগ্রাম অংশে ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ প্রায় ৭০ কিলোমিটার। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ওপর অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির।

চন্দ্রনাথ মন্দির তীর্থযাত্রীদের জন্য পবিত্র স্থান। এর পুরোনো নাম ছিল ‘সীতার কুণ্ড মন্দির’। দূর পাহাড়ে মেঘের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চারদিকে সবুজের সমারোহ। এমন দৃশ্য দেখলে ক্লান্তি কি আর থাকে? দূরে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। সবাই মিলে দেশের পতাকা নিয়ে ছবি তুলে ফেললাম। কেউ নামতেই চাইছে না। এত সুন্দর চারদিক। আমাদের হাতে সময় কম। যেতে হবে আরেক অপরূপ দৃশ্য দেখতে গুলিয়াখালীতে।

নামা শুরু করলাম। তার মধ্যে দুর্ঘটনার সম্মুখীন। হোচট খেয়ে পড়ে গেল একজন। মুখে চোট পেয়েছে। সবাই তাড়াতাড়ি পানি দিলো। ধরে ধরে নিচে নামালো। সবাই নামার পর তাড়াতাড়ি বাসে করে চলে গেলাম সীতাকুণ্ড বাজারে। দুপুরের খাবার খেতে। তখন ২টা বেজে গেছে। ব্যথা পেয়েছে আরেকজনও। সে নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে বায়োডিন দিয়ে ওয়াশ করে ব্যান্ডেজ করে ফেলেছে।

লাঞ্চ করে সিএনজি ভাড়া নিয়ে চলে গেলাম গুলিয়াখালী বিচে। গুলিয়াখালী বিচ সীতাকুণ্ড থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। সীতাকুণ্ড বাজারের একপাশে যেমন পাহাড় অন্যপাশে সাগর। গুলিয়াখালী বিচকে ‘মুরাদপুর বিচ’ও বলা হয়। সমুদ্রের তিন পাশে ছোট ছোট ম্যানগ্রোভ বন। যা গুলিয়াখালীর সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। গালিচার মতো সবুজে মোড়ানো এ বিচ কতটা সুন্দর, তা না দেখে বুঝতে পারবে না।

সবাই যখন ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত; তখন চলে এলো ঝুম বৃষ্টি। সবাই মহাখুশি। বৃষ্টিতে ভিজছে সবাই। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সূর্য ডুবে অন্ধকারে ডেকে যাচ্ছে। এখন আমাদের ফেরার পালা। আমরা যখন বিচ থেকে সিএনজি স্টেশনে আসছি; তখন ছোট মাটির রাস্তা পিচ্ছিল। সবাই আস্তে আস্তে হাঁটছে। পায়ে, কাপড়ে অনেক কাদা লাগছে। পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অনেক কষ্ট করে সিএনজি স্টেশনে এলাম। কেউ কেউ ট্রলারে করে আসছে। তখন বৃষ্টির কারণে ১২০-১৫০ টাকার গাড়ি ভাড়া নিচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা। নিরুপায় হয়ে গাড়িগুলো ভাড়া করতে হচ্ছে। প্রশাসনের নেই কোনো তদারকি। প্রশাসনের উচিত বিচ পর্যন্ত রাস্তা করে দেওয়া এবং তদারকির ব্যবস্থা করা।

সীতাকুণ্ড বাজারে যেতে যেতে ৮টা বেজে গেছে। বাসে উঠেই রওয়ানা হলাম চট্টগ্রামের দিকে। ঠিক ১০টার দিকে চলে এলাম টাইগারপাসে। এবার যে যার গন্তব্যে ফেরার পালা। এভাবেই আমরা তরুণ লেখকদের নিয়ে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে, রোমাঞ্চকর ভ্রমণ করে এলাম সীতাকুণ্ড থেকে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোনো বাসে সীতাকুণ্ড আসা যাবে। নন-এসি বাস জনপ্রতি ৬০০-৬৫০ টাকা এবং এসি বাস ৮০০-৮৫০ টাকা। ট্রেনে চট্টগ্রাম চলে আসা ভালো বা ফেনীতে নেমে ১০-১৫ টাকা দিয়ে রিকশা করে মহিপাল এলেই সেখান থেকে বাস পাওয়া যাবে।

কোথায় খাবেন

সীতাকুণ্ডে কয়েকটি ভালো রেস্তোরাঁ আছে। যেখানে ১৪০-১৫০ টাকা দিয়ে খাওয়া যায়।



আরো পড়ুন