ক্যানসারকে প্রাণঘাতী রোগ বলা হয়। প্রাথমিক স্টেজে যদি ধরা পড়ে, তবে এই রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ জন্য ক্যানসারের উপসর্গগুলো জানা প্রয়োজন। একইসঙ্গে এসব উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
চিকিৎসকদের মতে ক্যানসারের ১০ লক্ষণ হলো:
১। কারণ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া
ক্যানসার আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই কোনো কারণ ছাড়া ওজন হারাতে শুরু করে। এটাকে বলা হয় ব্যাখ্যাহীন ওজন হারানো। এতে চিন্তার কারণ আছে। কোনো কারণ ছাড়াই পাঁচ কেজি বা তার বেশি ওজন কমলে সেটি ক্যানসারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে। অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালী বা ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়ার এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
২। জ্বর
ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে সাধারণ একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। অবশ্য যে স্থানে ক্যানসার উৎপন্ন হয়েছে সেখান থেকে দেহের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে তখন প্রায়ই জ্বর দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে জ্বর ক্যানসরারের প্রাথমিক উপসর্গও হতে পারে। যেমন লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা।
৩। ক্লান্তি
ক্লান্তি বোঝানো হয়েছে চরম ক্লান্তিভাব যা বিশ্রাম নেয়ার পরও দূর হয় না। ক্যানসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু ক্যাসনার যেমন লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শুরুর দিকেই ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
কিছু কোলন বা মলাশয় ও পাকস্থলীর ক্যানসারের ক্ষেত্রে রক্তপাত হতে পারে তবে এটা সবক্ষেত্রে হয় না। এর কারণেও ক্যাসনারের সময় ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
৪। ত্বকে পরিবর্তন
ত্বকের ক্যাসনার ছাড়াও আরও কিছু ক্যানসার রয়েছে যাতে আক্রান্ত হলে ত্বকে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এর লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে রয়েছে, ত্বক কালো হয়ে যাওয়া বা হাইপারপিগমেনটেশন ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস ত্বক লাল হয়ে যাওয়া। চুলকানি মাত্রাতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি।
৫। অন্ত্রের ক্রিয়া বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন
কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা মলের আকারে দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন মলাশয়ের ক্যাসনারের লক্ষণ হতে পারে। অন্যদিকে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা, প্রস্রাবে রক্তপাত, বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন যেমন আগের তুলনায় কম বা বেশি প্রস্রাব করা ইত্যাদি মূত্রাশয় বা প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
৬। যে ক্ষত ভালো হয় না
অনেকেই জানেন যে দেহে যদি কোনো আঁচিল থাকে যেটি বাড়ে বা ব্যথা হয় বা সেটি থেকে রক্তপাত হয় তাহলে সেটি ত্বকের ক্যানসারের একটি লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু শরীরে যদি কোনো ক্ষত থাকে যেটি চার সপ্তাহের পরও ভালো হয় না বা সেরে যায় না, এমন ক্ষতের প্রতিও আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত। মুখে যদি এমন কোনো ক্ষত হয় তাহলে সেটি মুখের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
৭। রক্তপাত
ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় কিংবা তা ছড়িয়ে পড়ার পর অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্তপাত ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। অন্যদিকে যদি মলের সঙ্গে রক্তপাত হয় তাহলে এটি মলাশয় বা মলদ্বারে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
৮। শরীরের যে-কোনো স্থান শক্ত হয়ে যাওয়া
অনেক ক্যানসার ত্বকের মাধ্যমে শনাক্ত করা যেতে পারে। এ ধরণের ক্যানসার সাধারণত স্তন, অণ্ডকোষ, গ্রন্থি এবং শরীরের নরম টিস্যুতে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দেহে শক্তভাব বা মাংস জমে আছে- এ ধরণের অনুভূতি হয়। এটা এসব ক্যানসারের প্রাথমিক বা বিলম্বিত উপসর্গ হতে পারে।
৯। গিলতে অসুবিধা
ক্রমাগত বদহজম বা কোনো কিছু গিলতে গেলে সমস্যা হলে সেটা ইসোফ্যাগাস, পাকস্থলী বা গলার ক্যানসার লক্ষণ হতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত সব উপসর্গই ক্যানসার ছাড়াও অন্য আরও অনেক কারণেই দেখা দিতে পারে।
১০। টানা কাশি বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন
টানা কাশি ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এ ছাড়া কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসলে তা স্বরযন্ত্র বা থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।