২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || ০৮ আগস্ট, ২০২৪, ০৭:৩৮ এএম
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর নেই


ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। 

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০০০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বাম আমলের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এরপর কিছুদিন সক্রিয় রাজনীতিতে থাকলেও এক যুগের বেশি সময় আগে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে কলকাতার পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই তিনি মারা যান।আজ সকালে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তার ছেলে সুচেতন ভট্টাচার্য।

দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কয়েক মাস আগেই মারাত্মক শারীরিক সমস্যায় ভুগেছিলেন, শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছনোয় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। এছাড়াও ছিল নানাবিধ বার্ধক্যজনিত সমস্যা। গত কয়েক বছর ধরে ঘরেই নিয়মিত চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। গত বছর আগস্টে ১২ দিন হাসপাতালে থাকার পরে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরেছিলেন বুদ্ধদেব। সেই থেকে বাড়িতেই বাইপ্যাপ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে লাগানো ছিল রাইলস টিউবও। একটা কার্ডিয়াক মনিটরও ছিল, যাতে তার হার্টরেট, রক্তচাপ ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্রা দেখা যেত।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত তিনদিন জ্বরে ভুগছিলেন সাবে এই মুখ্যমন্ত্রী। তবে অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। আজ সকালে জ্বর বাড়ে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হয়। কিন্তু সেই সময় দেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ সকালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সিওপিডির অ্যাটাক হয়। ফলে স্যাচুরেশন লেভেল নামতে শুরু করে। হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

১৯৪৪ সালের ১ মার্চ জন্ম বুদ্ধদেবের। পাঁচ দশকের বর্ণময় রাজনীতিতে উজ্জ্বল নাম বুদ্ধদেবের। দীর্ঘদিন ধরে পলিট ব্যুরোর সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বাম দুর্গের অবসান ঘটে। ৩৪ বছরের বাম জমানার শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে পরাজয়ের পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে ক্রমশই দূরে সরে যেতে থাকেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৭২ সালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হয়েছিলেন বুদ্ধদেব। ১৯৭৭ সালে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রে প্রথম বার বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে রাজ্যে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব। ১৯৯৯ সালে উপমুখ্যমন্ত্রী হন তিনি।

দলীয় কর্মসূচিতে শেষবার ব্রিগেড জনসমাবেশে গিয়েছিলেন ২০১৯ সালে। তবে তখনও তিনি বেশ অসুস্থ, নাকে লাগানো ছিল অক্সিজেনের নল। সভামঞ্চের নীচে গাড়িতে মিনিট পনেরো বসে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে পাম অ্যাভিনিউয়ে দু'কামরার ফ্ল্যাটে আড়ম্বরহীন জীবন কাটিয়েছেন বুদ্ধদেব। তার পরনে থাকত সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি। গলার স্বরের গাম্ভীর্য, শব্দচয়ন, স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলায় কথা বলা, সবমিলিয়ে নিজস্ব ছাপ তৈরি করেছিলেন বুদ্ধদেব। সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকের ছায়া রাজ্য রাজনীতিতে।



আরো পড়ুন