মোংলা সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর এই বন্দর যুক্ত হচ্ছে রেলপথে। ইতোমধ্যেই খুলনা-মোংলা রেল পথের কাজ ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি একভাগ কাজ শেষ করতে চলছে তোড়জোড়। চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। চলবে ট্রায়াল রান। এরপর আগামী ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা রেল পথের উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রেলপথ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে নির্বাচনি জনসভায় ভাষণও দেবেন। খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ট্রানজিট সুবিধার আওতায় ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন সহজ করতে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল পথের কাজ হাতে নেয় সরকার। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসেন মাসুম জানান, প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ, মূল রেললাইন বসানো ও টেলিকমিউনিকেশন-সিগন্যালিং বসানো। প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১১ সালে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।
আহমেদ হোসেন মাসুম আরও জানান, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দফায় সংশোধনের পর ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেইসঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণকাজ করে। বাকি কাজ করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।
এই প্রকৌশলী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে। দুই দফায় প্রকল্প সংশোধনের কারণে ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। তবে তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। এবার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুরর কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন সপ্তম ও শেষ স্প্যানটি বসে রূপসা রেলসেতুতে। রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক এক তিন কিলোমিটার রেলসেতুর পুরোটাই শেষ হয়েছে। এই রেলপথের ১১টি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই রেলপথের ১০৭ ছোট ব্রিজ ও ৯ আন্ডারপাস নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।’
প্রকল্পের প্রধান আরও বলেন, ‘শতভাগ কাজ শেষের পথে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ট্রেনের একাধিক ট্রায়াল রান দেওয়া হবে। বিভিন্ন স্থানে রেলপথের ফিনিশিং, সিগন্যালিং-টেলিকমিউনিকেশনের কাজও শেষের পথে। এই রেলপথ উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বিশ্বের একমাত্র নিরবচ্ছিন্ন রেল সংযোগ হবে আন্তজার্তিক সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে। যা এই সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর পূরণ হতে চলছে।
ঢাকা বিজনেস/এনই