কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। জোয়ারে কক্সবাজারের প্রায় ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধস ও প্রাণহানীর আশঙ্কাও করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাতে যারা কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা সোমবার (২৭ মে) সকালে নিজ বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলায় বজ্রবৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বয়ে যায়। আগামী কয়েকদিন কক্সবাজারে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৈরী আবহাওয়ার ফলে প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে সাগর। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্রসৈকত ও উপকূলে। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে সমুদ্রের ঢেউয়ে তলিয়ে যায় সৈকতের লাবনী ও সুগন্ধা পয়েন্ট। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মহেশখালী,কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনে কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ সময় জোয়ারের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক শ কাঁচা ঘরবাড়ি। আগাম প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি না হলেও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গবাদি পশু, মাছের ঘের ও ফসলি ক্ষেত। বাড়িঘর ও জনপদ ভাসছে নোনাজলে। ঝড়ের সময় উপড়ে গেছে গাছপালা। বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিঘ্নিত হচ্ছে মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট সেবা। বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে।
ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ জেলায় পাহাড় ধসের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হচ্ছে । এই মুহূর্তে সাগরে গভীর নিম্নচাপ বিরাজ করছে। এ কারণে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার জেলায় ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আরও দু-একদিন বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করবে কক্সবাজারে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ো হাওয়া বেশি হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’
জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। একারণে মাছ ধরার সমস্ত ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে। যদিও ৯ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৩ করা হয়েছে। তারপরও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সমুদ্রে যাবে না কোনো মাছ ধরার ট্রলার।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত ও ঝড়োহাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। এই অবস্থায় লোকজনদের আশ্রয়-কেন্দ্রে নিরাপদে অবস্থানের জন্যে বলা হচ্ছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।’
/ঢাকা বিজনেস/এনই