২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



লাইফ স্টাইল
প্রিন্ট

শিশুদের অতিরিক্ত চঞ্চলতা কিসের ইঙ্গিত, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ শুনুন

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ২০ মে, ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম
শিশুদের  অতিরিক্ত চঞ্চলতা কিসের ইঙ্গিত, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ শুনুন



চঞ্চলতা শিশুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। শিশুরা তাদের আপন জগতে ব্যস্ত থাকে। তাদের হাসি-কান্নায় ভরে ওঠে ঘর। তবে শিশুদের চঞ্চলতাও অনেক সময় বাবা-মায়ের চিন্তার কারণে পরিণত হয়। কারণ, শিশুর মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চলতা সমস্যার কারণ হতে পারে। সাইকোলজিস্ট সূরাইয়া ইসলাম মুন্নি এই তথ্য জানান। 

বিষয়টি নিয়ে মুন্নি বলেন, শিশুদের চঞ্চলতা, মাঝেমধ্যে স্কুলের হোমওয়ার্ক করতে ভুলে যাওয়া, চিন্তা না করে কথা বলা বা কাজ করা ইত্যাদি স্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু চার বছর বয়সের পর অতি চঞ্চলতা, অমনোযোগ এবং অনিয়ন্ত্রিত আচরণ অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভ ডিসওর্ডারের (এডিএইচডি) লক্ষণ হতে পারে। এডিএইচডি এক ধরনের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা। সাধারণত বারো বছরের হওয়ার পূর্বে শিশুদের মাঝে এডিএইচডিয়ের লক্ষণ দেখা দেয়। 

যা দেখে বোঝা যায় শিশুর এডিএইচডি থাকতে পারে:  

অমনোযোগ: শিশু মনোযোগ রাখতে না পারায় স্কুলের কাজ এবং নিজের দৈনন্দিন কাজে ভুল করে বা কাজ শেষ করতে পারে না। মনোযোগ রাখতে হয় এমন কাজ শিশু এড়িয়ে চলে। সরাসরি কোনো কথা শিশুকে বলা হলে শিশু তা শোনে না। কোনো কাজ গুছিয়ে করতে পারে না। জিনিস হারিয়ে ফেলে। খুব সহজে মনোযোগ ভিন্নদিকে চলে যায়। 

অনিয়ন্ত্রিত আচরণ: শিশু চিন্তা না করে কাজ করে। অন্যরা কথা বলার সময় বা কাজ করার সময় বাঁধা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত কথা বলে। কথা না বলার নির্দেশনা দেয়া হলেও চুপ থাকে না। প্রশ্ন শেষ করার অপেক্ষা না করে উত্তর দেয়া শুরু করে।

অতি চঞ্চলতা: শিশু সবসময় ছটফট করে। স্থির থাকতে পারে না। অস্থিরভাবে হাত বা পা নাড়াচাড়া করে। ক্লাসে বসে না থেকে সিট ছেড়ে লাফালাফি বা দৌড়াদৌড়ি করে। নিয়ম না মানায় খেলায় অংশগ্রহণে অসুবিধা হয়। 

কখন দুশ্চিন্তা করবেন

চার বছর বয়সের পর ছয় মাসের বেশি সময় ধরে শিশুর মাঝে অমনোযোগ, অনিয়ন্ত্রিত আচরণ এবং অতি চঞ্চলতার বৈশিষ্ট্য দেখা দিলে অবশ্যই একজন সাইকোলজিস্ট এবং সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। 

করণীয়

১। শিশুকে অবশ্যই সাইকোলজিস্ট এবং বিহেভিয়ার থেরাপিস্টের মাধ্যমে আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা শেখাতে হবে। 

২। শিশুকে নির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্পষ্ট ভাষায় ছোট ও নির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। যেমন,‘এখানে আসো’, ‘বাংলা বইয়ের ১২ পৃষ্ঠা পড়’, ‘বই স্কুল ব্যাগে রাখো’। শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে শিশুর সঙ্গে আই কন্টাক্ট করতে হবে। 

৩। যে সব শিশু স্কুলে যায়, তাদের শিক্ষকের সাথে কথা বলে শিশুকে ক্লাসের প্রথম সাড়িতে বসান। যেহেতু এডিএইচডি আছে এমন শিশুদের মনযোগ কম তাই ব্ল্যাকবোর্ডের সব লেখা কপি করা শিশুর জন্য কষ্টকর। শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে সব কিছু শিশুকে লিখে নিয়ে আসতে হবে এমন নির্দেশনা প্রদান না করা এবং শাস্তি না দেয়া। 

৪। শিশুকে বাসায় বাড়ির কাজ বা খেলাধুলা করার সময় একটি শান্ত স্থান দিন। নির্দিষ্ট স্থানটিতে যে কোন শব্দ বা অগোছালো রাখা থেকে বিরত থাকুন।

৫। শিশুকে সে সব কাজ করতে দিন, যে কাজে শিশুর সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। শিশু কোন কাজ ও আচরণ সঠিকভাবে করলে তার প্রশংসা করুন। যেন শিশু বুঝতে পারে তার ভালো কাজ ও আচরণ প্রশংসনীয়। নির্দিষ্ট ভাবে প্রশংসা করতে হবে। যেমন, ‘তুমি অনেক লক্ষ্মী বাচ্চা’, ‘তুমি ছবি সুন্দর করে রং করেছো’। নির্দিষ্টভাবে প্রশংসা করা না হলে শিশু বুঝতে পারবে না তাকে কেন বা কি কারণে প্রশংসা করা হয়েছে। 

এডিএইচডি আছে এমন শিশুদের বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্যদের ধৈর্যশীল হতে হবে।  সন্তানকে বকা দিয়ে কিংবা মারধর করে কোনো সমাধান আসবে না।



আরো পড়ুন