মাঠের পর মাঠ জমিতে সবুজ পাতার আড়ালে হাসছে হলুদ রঙের ভুট্টা। মাথায় লাল ফুল ও গায়ে হলুদ বর্ণের এসব ভুট্টা দোল খাচ্ছে বাতাসে। চাষিদের জমিতে রোপণ করা ভুট্টা গাছে মুচা বাঁধতে শুরু করেছে। বাতাসে ভুট্টার দোল খাওয়ার সঙ্গে চাষিরাও স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে।
ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জের চাষিদের মধ্যে। এই মৌসুমে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন প্রায় দুই হাজার চাষি। জানা যায়, গত মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয়েছিল মাত্র ১০০ হেক্টর জমিতে। ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় গত মৌসুমের চেয়ে এই মৌসুমে ৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, খরচ কম ও উৎপাদন বেশি হওয়ায় চাষিদের মধ্যে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আর তাদের বেশি করে উদ্বুদ্ধ করতে হচ্ছে না। অনেক চাষি নিজে আগ্রহী হয়ে ভুট্টা চাষ করছেন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, ৩-৪ বছর আগে এ উপজেলায় ভুট্টা চাষির সংখ্যা ছিল অনেক কম। ওই সময় হাতেগোনা ৭০০ থেকে ৮০০ চাষি ভুট্টা চাষ করতেন। কিন্তু সেই অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। গত মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১১০ হেক্টর জমিতে। আর এ মৌসুমে সাড়ে ১১৭ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে ৭৫হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ‘মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি, বলইবুনিয়া, মোরেলগঞ্জ সদর ও খাউলিয়া ইউনিয়নের জমিতে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে।’
বরইবুনিয়া গ্রামের ভুট্টা চাষি শুকুর আলী জানান, তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। ৫০ শতক জমিতে ভুট্টা আবাদ করতে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও পরিচর্যা বাবদ তার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শতক প্রতি তিনি এক থেকে দেড় মণ করে ভুট্টা পাবেন। ফলন ভালো হলে সে হিসেবে শুকুর আলী ৫০ শতকে কমপক্ষে ৫০ মণ ভুট্টা পাবেন। বাজারে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে ভুট্টা বিক্রি হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।
মোরেলগঞ্জ সদর ও খাউলিয়া ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি আক্তার, জহর, সামাদ, নুরুল ইসলাম প্রমুখ চাষি জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম। কারণ ভুট্টায় রোগ-বালাই খুব কম হয়। চারা লাগানো থেকে শুরু করে ৫ মাসের মধ্যে ভুট্টার ফলন পাওয়া যায়। খরচ বাদে প্রায় অর্ধেক লাভ থাকে। বাজার ভাল হলে লাভও বেশি হয়।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা খাউলিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহা-নেওয়াজ খান সজিব জানান, খাউলিয়া ইউনিয়নে ৪ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে চলতি মৌসুমে ১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হেক্টর জমিতে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আকাশ বৈরাগী বলেন, চলতি মৌসুমে ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে সাড়ে ১৭৫ হেক্টর জমিতে। এই হিসাবে এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর জমিতে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
আকাশ বৈরাগী আরও বলেন, ‘ভুট্টায় তেমন একটা রোগ-বালাই হয় না। তাই ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম আবার লাভও ভাল হয়। যার কারণে আগের থেকে ভুট্টা চাষে চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। এ মৌসুমে প্রায় ২ হাজার চাষি ভুট্টার আবাদ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়াতে ১৭০ জন চাষিকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এসব চাষিকে বিনামূল্যে ২০ কেজি ডিএপি ও ১০কেজি এমপিও সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভুট্টার ওপর ৩০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/