১৯ মে ২০২৪, রবিবার



মাদারীপুরে হঠাৎ বেড়েছে বাসভাড়া, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর || ০৯ মার্চ, ২০২৩, ০৪:৩৩ পিএম
মাদারীপুরে হঠাৎ বেড়েছে বাসভাড়া, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা


মাদারীপুর থেকে ঢাকা সড়কে দূরপাল্লার বাসভাড়া ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতি। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ,  কোনো ধরনের নোটিশ কিংবা প্রজ্ঞাপন না দিয়েই মালিক সমিতি হঠাৎ করে ভাড়া বাড়িয়েছে। আর মালিক সমিতি বলছে, সরকার-নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। 

মাদারীপুরের বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে , ৩০০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করায় প্রতিবাদ করছেন অনেকেই। যাত্রীরা এই রুটের বাসবর্জনের ডাকও দিচ্ছেন। তাদের এই প্রতিবাদ চলমান রয়েছে গত দুই সপ্তাহ ধরে। তারা বিকল্প যানবাহন ও বিকল্প রুটে রাজধানীতে যাতায়াত করছেন। এতে যাত্রীসংকটে পড়েছে মাদারীপুর-ঢাকা রুটের বাসগুলো। 

মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন কোম্পানি রয়েছে তিনটি। সার্বিক পরিবহন, চন্দ্রা ও সোনালী পরিবহন। 

এদিকে, মাদারীপুর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) -সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব  ১১১ কিলোমিটার। সরকার-নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা। বাসে ৫২ সিটের স্থানে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে ৪০ সিটের বাস। ৪০ সিটের বিবেচনা করলে এতে ভাড়া দাঁড়ায় ৩০৪ টাকা ২৭ পয়সা। এদিকে পদ্মা সেতুর টোল ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৪৯৫ টাকা। সে ক্ষেত্রে ৪০ জন যাত্রীর ৭০ শতাংশ ধরে জনপ্রতি শুধু টোল ভাড়া দাঁড়ায় ৮৯ টাকা ১০ পয়সা। এতে যাত্রী প্রতি ভাড়া দাঁড়ায় ৩৯৩ টাকা ৩৭ পয়সা। এই হিসাবে  ৬ টাকা ৬৩ পয়সা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। 

বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী সোনালি, সার্বিক, চন্দ্রা ও মাদারীপুর পরিবহনগুলোতে নেই তেমন যাত্রীর চাপ। বেশিরভাগ বাসই ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হচ্ছে। এদিকে, কিছু যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর কথা শুনে মুখ ফিরিয়ে বিকল্প পথে মোস্তফাপুর ও শরীয়তপুর রুট হয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন।

মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী মাসুদ হাওলাদার বলেন, ‘চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢাকা যাচ্ছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি ৩০০ টাকার জায়গায় এখন বাসভাড়া ৪০০ টাকা। তাই বিকল্প পথে মোস্তফাপুর থেকে বরিশালের গাড়িতে ঢাকা যাবো। যতদিন এই অযৌক্তিক ভাড়া কমানো না হবে, ততদিন মাদারীপুরের সব বাস বয়কট করলাম।’

মো. কাওসার হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘পেট্রোল তেলের দাম বাড়েনি। হঠাৎ করেই ১০০ টাকা ভাড়া বাড়ানোটা অযৌক্তিক। আমরা সবাই মাদারীপুর সড়ক পরিবহন সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নিয়ম হতে পারে না। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে ভাড়া কমিয়ে আগের ভাড়া নিশ্চিত করা হোক।’

ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার কামরুল হাসান তুষু বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছি। অনেকে এ সম্পর্কে না বুঝে জনগণকে ভুলপথে পরিচালিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা অবৈধভাবে ভাড়া আদায় করলে রাস্তায় ট্রাফিক রয়েছে, তারাই আমাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করতো।’ 

আগের ভাড়া ৩০০ রাখার ব্যাপারে কামরুল হাসান  বলেন, ‘আমরাই যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে সরকারি রেটের চেয়ে ভাড়া কমিয়ে ৩০০ টাকা রাখতাম। কিন্তু এখন সরকারি রেট অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কথা হয় বিআরটিএ মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নূরুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই ভাড়া আমাদের হেডকোয়ার্টার থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী এই রুটের ভাড়া ৩৯৩ টাকা আসে। এখানে সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ীই নেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘জেলা পর্যায়ের বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটির আমি একজন সদস্য। ভাড়া বাড়ানোর আগে এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে আমার জানা নেই। তবে আমরা শুনতে পেয়েছি, হঠাৎ করে ১০০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তা-ছাড়া বিআরটিএ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তারাও বিষয়টি দেখছেন।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন