১৭ জুন ২০২৪, সোমবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

ঈদের আনন্দ হোক সব মানুষের

মাহমুদা সুলতানা || ০৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:০০ এএম
ঈদের আনন্দ হোক সব মানুষের


ঈদুল ফিতর মানে একমাস সিয়াম সাধনা শেষ করার আনন্দ। আমরা সাধারণত মনে করি রোজার মাস শেষে যে ঈদ হয় শুধু সেটাই ঈদুল ফিতর। আসলে ঈদুল ফিতরের ধারণা আরো অনেক ব্যাপক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই আনন্দের জন্য একটি আরবি শব্দ ব্যবহার করতেন তা হলো ফারহাতুন।

তিনি আরও বলেন, এই ফারহাতুন বা আনন্দ দুটি। এক রোজা ভাঙার আনন্দ অর্থাৎ ফিতরের আনন্দ। দুই প্রত্যেক রোজার পর যে ফিতর বা ইফতার করা হয়, তাতেও একটা আনন্দ রয়েছে। আর প্রধান আনন্দ হয় রমজান মাস শেষে অর্থাৎ সব রোজা শেষে রমজান মাসের পরের দিন যে আনন্দ করা হয় যা ঈদুল ফিতর নামে পরিচিত।

সারকথা সিয়াম সাধনা শেষ করার পর অর্থাৎ সব বাধ্যবাধকতা মূলক রোজাগুলো সমাপ্ত করার পর রোজা সমাপ্তির যে আনন্দ, সেটি হলো ঈদুল ফিতর। দ্বিতীয়ত, সিয়াম সাধনা সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত করার আসল আনন্দ হবে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।

আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ের ব্যাপক আনন্দের দিকে না গিয়ে আমি একটু সেই ছোট্টবেলার ঈদের আনন্দটা কেমন ছিল সেদিকে আলোকপাত করতে চাই। কেমন ছিল আমাদের ছেলেবেলার সেই ঈদ কেমন তার আনন্দ মজাই বা কী পরিমাণ! ঈদ তখনো ছিল, এখনো আছে। শুধু সময়-স্থান-মানুষগুলো বদলে গেছে।

দিন বদলের সঙ্গে সবই বদল হয়ে অন্যরূপ ধারণ করেছে। ভালো থাকুক আমার সেই দিন এই দিন আজকের দিন সবাই সব মানুষ।


আমি বড় হয়েছি গোপালগঞ্জ জেলার এক অজপাড়া গাঁয়ে। আমাদের গাঁয়ের মানুষগুলো তখন খুব বিত্তবান ছিল না বললেই চলে। অল্প কিছু মানুষ ছিল সচ্ছল বাকিরা কষ্টেই দিন কাটাতে দেখেছি আমি। অবশ্যই এখন সবাই মোটামুটি বেশ ভালো আছে। কিন্তু তখন এর ঈদটা আমার মনে খুব দাগ কেটেছে। মনে হয় যদি আবার ফিরে যাওয়া যেত সেই ছোট্টবেলায়।

ঈদের নামাজ পড়ে এসেই আব্বাকে খেতে দেখতাম আমার দাদু আতপ চাল ভিজিয়ে কলাগুড় দিয়ে মেখে খুব মজার একটা খাবার বানিয়ে রাখতেন। খুব অল্প পরিমাণে সেটা হাতে হাতে দিতেন। ওটা খেলে নাকি পেট ভালো থাকে। একমাস রোজার পরে গুরুপাক খাবার যেন আগেই পেটে না পড়ে। এরপর অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থা। আব্বা ওই খাবারটা খেয়েই জাকাত দিতে বসে যেতেন। একদম সামনের বারান্দায় ঘরের চারপাশের দরজা লাগিয়ে। আব্বা নতুন টাকা নতুন অনেক শাড়ি লুঙ্গি বাচ্চাদের কাপড় নিয়ে বসে যেতেন। কয়েক গ্রামের লোকের  নামের তালিকা তৈরি করা থাকতো।  কিছু গরিব আত্মীয়-স্বজনের তালিকা করা হতো। যারা জাকাত পেতে পারেন। লাইন ধরে কত মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতো, ওই সময়টা ছিল আমার কাছে ভীষণ আনন্দের।  ঈদের কয়েকদিন আগে আব্বা আমাদের ভাইবোনদের কাছেও জিজ্ঞাসা করতেন আমাদের কারও কাছে কোনো টাকা পয়সা আছে কি না। আমাদের যার যা থাকতো, সেটা বলতাম।

সাধারণত আর কারও কাছে থাকতো না। কিন্তু আমার কাছে আমার হাত খরচের টাকাটা থেকেই যেতো। আব্বা-দাদা ভাই-কাকু-ফুপুরা সব সময় দিতেই থাকতেন। আর হাত খরচ করার টাকাটা দিতেন, সেটা আমার খরচ করার প্রয়োজনই পড়তো না । কেমন করে খরচ করবো, আমি তাও জানতাম না। কিন্তু বাকিরা কেমন করে যেন সব খরচ করে ফেলতো। যাই হোক জমা খরচের কথা নাইবা বললাম। আমার দাদা আমার জন্য ঈদের ভারি সুন্দর একটা শপিং করতেন, সে কিন্তু জামা কাপড় নয়। এক বোতল আলতা লাল তাগা চুড়ি ঘ্রাণতেল; এরকম অনেক কিছু। এখনো আমি আলতাটা খুব মিস করি। আলতা পরা আমার খুব পছন্দের একটা সাজ। কিন্তু আর পরা হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এখন জাকাতের টাকা বাড়িতেও সেভাবে দেওয়া হয় না। আব্বার মাদ্রাসায় এতিমখানায় কেমন করে জানি এখন দিয়ে দেয় সে খবরও আমি আর রাখি না।

ঈদের দিনের রান্না খাওয়া কিন্তু গ্রামে তখন অন্যরকমই ছিল। নারকেল গুড় দিয়ে একটা সিন্নি রান্না হতো, তার নাম সরগাই। সে এখন আর নেই। এখন অন্যরকম ঈদ জাঁকজমকপূর্ণ শুধু আনন্দটা ও অন্যরকম হয়ে গেছে। দিন বদলের সঙ্গে সবই বদল হয়ে অন্যরূপ ধারণ করেছে। ভালো থাকুক আমার সেই দিন এই দিন আজকের দিন সবাই সব মানুষ।




আরো পড়ুন