২১ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার



শেয়ার দর বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে কী

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ২৩ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৬:০১ পিএম
শেয়ার দর বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে কী


দেশের বৃহত্তম শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোমবার (২৩ জানুয়ারি) টপ টেন গেইনারের তালিকায় ছিল স্বল্পমূলধনী ৪টি কোম্পানি। এদিন এসব কোম্পানির  অস্বাভাবিক শেয়ার দর বাড়লেও ডিএসই এই ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এদিকে টপটেনে থাকা প্রথম তিনটিসহ চার কোম্পানিই অত্যন্ত স্বল্পমূলধনী। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সন্দেহ, কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর গেম্লিং করে বাড়িয়েছে অসাধু চক্র।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, সোমবার স্বল্পমূলধনী যেসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, সেগুলো হলো বাংলাদেশ মনোসপুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড, জেমিনি সি ফুড লিমিটেড ও মন্নো অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারি লিমিটেড।

বাংলাদেশ মনোসপুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের পেইড আপ ক্যাপিটাল বা পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি এনএভি বা প্রকৃত সম্পদ মূল্য ৪৪.৮৮ টাকা। স্বল্পমূলধনী কোম্পানিটির শেয়ার প্রাইস একদিনের ব্যবধানে একলাফে ২০.৪ টাকা বা ৮.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ওরিয়ন ইনফিউশনের পেইড আপ ক্যাপিটাল মাত্র ২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর এনএভি মাত্র ১৩.১০ টাকা। অথচ সোমবার কোম্পানিটির শেয়ার দর এসে দাঁড়িয়েছে ৩৬৭.৫০ টাকা। একদিনের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫.৭ টাকা বা ৭.৫ শতাংশ। জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির এনএভি মাত্র ১৩.১০ টাকা। অথচ সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমাপনী দর ছিল ৪২৯ টাকা। একদিনের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ টাকা বা ৭.২৫ শতাংশ।

সোমবার ডিএসই’র টপটেনের পাঁচ নম্বরে থাকা মন্নো অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারি লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন মাত্র ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর এনএভি ১৭৩.৯৭ টাকা। রবিবার (২২ জানুয়ারি) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমাপনী দর ছিল ৭৬০.৯ টাকা। একদিনের ব্যবধানে সোমবার কোম্পানিটির শেয়ার দর এসে দাঁড়িয়েছে ৮০৬ টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে শেয়ার দর বেড়েছে ৪৫.১০ টাকা বা ৫.৯ শতাংশ।



বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষধের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘অনেক স্বল্পমূলধনী কোম্পানি রয়েছে যাদের প্রডাকশন বা উৎপাদন নেই। অথচ শেয়ার দর হুহু করে বাড়ছে। মূলত এসব কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা খুব কম থাকে। ফলে গেম্লারদের গেম্লিং করতে সুবিধা হয়। অনেক সময় স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসব গেম্লিংয়ের সঙ্গে নিজেরাই জড়িত থাকেন। এসব ব্যাপারে ডিএসই’র কঠোর হস্তে নজরদারি করা উচিত।’

বাংলাদেশ মনোসপুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের সচিব মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘কেন শেয়ার দর এ রকম অস্বাভাবিক বাড়লো, তা  জানি না। আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো বিষয় নেই যে, শেয়ার দর এ রকম বাড়বে।  কেন শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়লো, তার কারণ ডিএসই বলতে পারবে।’ 

ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের সচিব রাহাত মাহমুদ বলেন, ‘মার্কেট দীর্ঘদিন খারাপ ছিল। এখন মার্কেট ভালো হয়েছে। মার্কেটের ভালো হওয়ার টাচে অনেক কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছে। এছাড়া জুন ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলোর দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন কিছুদিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে।  সে কারণেও  আমাদের কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে পারে।’

মন্নো এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল ম্যাশিনারি লিমিটেডের অ্যাসিসটেন্ট কোম্পানি সেক্রেটারি বিনয় পল বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি স্বল্পমূলধনী কোম্পানি। শেয়ার সংখ্যা কম। ফলে কেউ একটু বেশি শেয়ার কিনলে শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। আবার দ্রুত এসব শেয়ারের দর কমে যায়। আমাদের কাছে এই শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো তথ্য জানা নেই।’

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বাজারের পরিস্থিতির কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়তে পারে। এখানে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক বলে কিছু নেই।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন