২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



শেষ হলো নিষেধাজ্ঞা: জেলেরা ছুটছেন কাঁকড়া শিকারে

জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট || ০৩ মার্চ, ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
শেষ হলো নিষেধাজ্ঞা: জেলেরা ছুটছেন কাঁকড়া শিকারে


চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরনের কাঁকড়া আহরণের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। এর আগে, ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরো সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। যদিও ১ মার্চের আগে লিফইয়ারের কারণে ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কাঁকড়া আহরণ শুরু হয়েছে। এই বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুন্দরবন বিভাগ জানায়, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রপ্তানি পণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন মওসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমান কাঁকড়া জন্ম নেয়। মা কাঁকড়া রক্ষার জন্যই প্রতি বছরের এ সময়ে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ।

কাঁকড়া ব্যবসায়ী মো. আলম খান বলেন, ‘বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকা থেকে কয়েক কোটি টাকার বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়া রপ্তানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। রপ্তানি করা কাঁকড়ার ৯৯ শতাংশ সুন্দরবন থেকে আহরণ করা হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে কাঁকড়া রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।’

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কাঁকড়া জেলে নিমাই চন্দ্র বালা বলেন, ‘আমার প্রধান পেশা সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ করা। কাঁকড়া আহরণে নিষেধাজ্ঞার দুই মাস আমি অন্য পেশায়ও যুক্ত হতে পারি না।’

বছরে দুইমাস বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়ে মোংলার জয়মনি এলাকার কাঁকড়া জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীদের প্রণোদনা দেয়। কিন্তু আমাদের জন্য কিছু নেই।’

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ‘কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মুখে বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাঁকড়া গভীর সাগরের দিকে ছোটে। এছাড়া এই সময় নদীর পানি থেকে সাগরের পানি গরম এবং নদীর পানির থেকে সাগরের পানির লবণাক্ততা বেশি থাকে। এসব কারণেও নদী-খাল থেকে কাঁকড়া সাগরে ছুটে যায়। কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যেন তাদের ধরতে না পারে, সেজন্য অভায়ারণ্য সুন্দরনে মা কাঁকড়া রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন ব্যিভাগ। এছাড়া মা কাঁকড়ার যখন ডিম হয়, তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। তারা ক্ষুধার্ত থাকে। তাদের সামনে যে খাবার দেওয়া হয়, তারা দ্রুত তা খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। এতে প্রজনন মৌমুমে খুব সহজেই জেলেরা কাঁকড়া শিকার করতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি এই সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয়, তাহলে পরবর্তী বছরে অধিক হারে কাঁকড়া উৎপাদন বাড়বে।  বিদেশে  রপ্তানি করাও সম্ভব হবে।’

পূর্ব-সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বলেন, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজননের মৌসুম। এই সময় কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। আর এই নিষিদ্ধ সময় বলবৎ থাকে শুধু সুন্দরবন এলাকায়।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন