২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



দুয়ারে বসন্ত, রঙে রঙে সেজেছে শিমুল বাগান

তানভীর আহমেদ, সুনামগঞ্জ || ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০১:০২ পিএম
দুয়ারে বসন্ত, রঙে রঙে সেজেছে শিমুল বাগান


ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে নবযৌবনের সাজে সাজতে শুরু করেছে প্রকৃতি। আর এই প্রকৃতিই রঙ লালে লাল হয়ে আহ্বান জানাচ্ছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দেশের বৃহত্তর শিমুল বাগানে আবারও জমেছে প্রাণের মেলা। গাছে গাছে থোকায় থোকায় লাল শিমুল ফুল ফুটেছে। 

শহুরে জীবনের ব্যস্ততা আর কোলাহলময় একঘেয়েমি জীবনে একটু স্বস্তির আশায় পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে হেসে-খেলে, গানে-গানে আড্ডায় সময় পার করেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। যাপিত জীবনের অস্থিরতা ভুলে কিছু সময় প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে আনন্দে সময় কাটাতে দেশ-বিদেশের মানুষ এসেছেন শিমুল বাগানে। 

সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা তাহিরপুর। এই উপজেলার লাউড়েরগড় এলাকার একপাশে মেঘালয় পাহাড়, অন্যপাশে এই শিমুল বাগান। আর এই দুইয়ের বুক চিরে বারিকের টিলার কোলঘেঁষে বয়ে গেছে যাদুকাটা নদী। যাদুকাটা নদীতে পানি কম থাকায় পড়ে আছে বালুচর। বছরের এ সময়টাতে এসে শিমুল বাগান, মেঘালয় পাহাড়, বারিকের টিলা আর যাদুকাটা নদী; সব মিলিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।  

এই শিমুল বাগান একেক সময় একেক রূপ নেয়। বর্ষায় শিমুল বাগান সবুজপাতায় আবৃত থাকে আর বসন্তে পাতা ঝরে গিয়ে রক্তিম আভায় সাজে পুরো এলাকা।  তবে মেঘালয় পাহাড় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলেও সৌন্দর্যে এতটুকু কমতি হয় না। মেঘালয় পাহাড়, যাদুকাটা নদী, বালুচর; সেই সঙ্গে শিমুল ফুলের রক্তিম আভায় লাউড়েরগড়কে দেয় অনন্য এক রূপ।    


জানা গেছে, ২০০৩ সালে তাহিরপুর উপজেলার জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যক্তি প্রথমে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ৩৩ একর জমির ওপর এই শিমুল বাগান গড়ে তোলেন। এই বাগানে প্রায় ২ হাজার ২৩টি শিমুল গাছ রয়েছে। আর এখন প্রায় সব গাছেই ফুল ফোটে। প্রথমে শুধু তুলা সংগ্রহের জন্য গাছ লাগানো হলেও এখন বিনোদনের জন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  জয়নাল আবেদীন মারা যাওয়ার পর তার সন্তানরা এই বাগানের দেখভাল করেন; এই বাগানের পরিচর্যা করেন। 

শিমুল বাগানের স্বত্বাধিকারী সাবেক চেয়ারম্যান রাকাব উদ্দিন বলেন, ‘শিমুল বাগান প্রথমে তুলা সংগ্রহের জন্য করা হলেও পরে এই বাগানের ফুলের সৌন্দর্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে দর্শনার্থীরা এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান। তাই পর্যটকের কথা মাথায় রেখে বাগানকে সুসজ্জিত করা হয়। দর্শনার্থীরা যেন আরও নিরিবিলিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তাই রিসোর্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবছরই বাগানকে নতুন নতুন সাজে সাজানো হচ্ছে।’

শিমুল বাগান যেভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী অথবা সায়েদাবাদ ফকিরাপুল থেকে এনা, শ্যামলী, হানিফ, মামুন পরিবহনসহ যাত্রীবাহী বাসে সুনামগঞ্জ আসতে সাড়ে ৭শ থেকে সাড়ে ৮শ ভাড়া লাগবে। ঢাকা থেকে রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাস ছেড়ে আসে। একইভাবে সুনামগঞ্জ থেকেও একই সময়ে বাস ছেড়ে যায়। সুনামগঞ্জ শহর থেকে তাহিরপুরের শিমুল বাগানে যেতে হলে যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল, সিএনজি, লেগুনা, প্রাইভেট কার ভাড়া নিতে পারবেন। এক মোটরসাইকেলে দুইজন যেতে পারবেন। শিমুল বাগানে যেতে ভাড়া লাগবে ৪০০ টাকা। সিএনজিতে গেলে ১০০০ হাজার টাকা। একসঙ্গে অনেকে যেতে চাইলে পুরনো বাসস্টেশন থেকে লেগুনা ভাড়া নেওয়া যাবে। সারাদিনের জন্য আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ পড়বে। 

সুনামগঞ্জে পৌঁছে বাস কাউন্টারের পাশেই থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরে ভালোমানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল রয়েল ইন, হোটেল ওমর, প্যালেসে এসি নন-এসি রুম আছে। এসব হোটেলে শুধু থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। একরাত থাকতে ১ হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়বে। আর মাঝারি মানের হোটেলে এক রাত ৫শ থেকে এক হাজার টাকা খরচ পড়বে। খাবার হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে পানশি রেস্টুরেন্ট, রোজ গার্ডেন, হক, অ্যাম্ব্রশিয়া। 



আরো পড়ুন