জমে উঠছে ২৮তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। প্রথম পাঁচ দিন ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম কম থাকলেও শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে বাড়তে শুরু করেছে। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলাপ্রাঙ্গণ জমে উঠেছে। মেলায় অংশ নেওয়া ভিসতা ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের প্যাভিলিয়নে দেখা গেছে, উপচেপড়া ভিড়। বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, বিক্রিও হচ্ছে ভালো।
মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীরা জানান, কোনো কোনো স্টল, প্যাভিলিয়নে পণ্যের দাম বেশি রাখছে। আবার কোনো কোনো স্টল, প্যাভিলিয়নে দাম কম রাখছে। সামগ্রিকভাবে মেলায় কাঙ্ক্ষিত দাম অনুযায়ী পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, গতকাল থেকে ক্রেতাসমাগম বেড়েছে। প্রথম দিকে বিকিকিনি হতাশাজনক ছিল। তবে এখন ক্রেতার চাপ কিছুটা বেড়েছে। আশা করছি সামনে ক্রেতাসমাগম আরও বাড়বে। বেচাকেনাও বাড়বে।
বিক্রেতারা আরও জানান, এবারের মেলাটি ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ-ই মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ ২১ জানুয়ারি মেলা শুরুর ঘোষণা দেয়। যে-কারণে অনেকের মেলার প্রস্তুতি নিতে দেরি হয়েছে। তবে এখন অধিকাংশ ব্যবসায়ী মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছেন।
মেলায় কেনাকাটা করতে এসেছেন রিদয়। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর চাদর কিনেছি। দাম একদম ঠিক আছে। মেলায় এসে ভিষণ ভালো লাগছে।’
ব্যাংকে চাকরি করেন আফরোজা। মেলায় এসেছেন ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি স্টলে গিয়েছিলাম। কোথাও দাম বেশি, আবার কেথাও দাম কম। সব মিলিয়ে দামের দিক দিয়ে এভারেজ। ব্যবসায়ীদের তো মেলায় বিভিন্ন খরচ হয়। তাদের মুনাফার দিকটাও তো দেখতে হবে।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যনৈমিত্তিক থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিস মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় চায়নার ব্লেজার প্রতিটি ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডেনিম ব্লেজার। ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ৬ পিচের স্টিলের চায়ের চামচ, কাটা চামচ, একটি করে স্টিলের প্লেট, বাটিও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। মেলায় কাঠের আলমারি পাওয়া যাচ্ছে ৩৯ হাজার ৩৭৫ টাকায়, ৫ ফুট বাই ৭ ফিটের কাঠের খাট পাওয়া যাচ্ছে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকায়, ইজিচেয়ার বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার ৭৫০ টাকায়।
ভিসতা ইলেক্ট্রনিকস মেলা উপলক্ষে ক্রেতাদের ২০ শতাংশ ডিসকাউন্টে বিক্রি করছে বিভিন্ন সাইজের অ্যান্ড্রয়েড টিভি। ভিসতা ইলেক্ট্রনিকস-এর বিক্রয়কর্মী ফারজানা শারমিন উর্মী ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মেলার শুরুর দিকে ঢিমেতালে চলেছে বেচাকেনা। তবে শুক্রবার থেকে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো হচ্ছে। ভিসতার টিভির চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে। চাহিদা রয়েছে এসি, রাইস কুকার, গ্লাইন্ডারের। ক্রেতার সংখা যেভাবে বাড়ছে, আশা করছি ভালো ফল পাবো। আমরা ক্রেতাদের জন্য ২০ শতাংশ ডিসকাউন্টে টিভি সেল করছি। কখনো কখনো ২০ শতাংশের বেশি ডিসকাউন্ট দিয়েও আমরা টিভি সেল করছি। আমাদের টিভি ব্যবহার করে ক্রেতারা অনেক আরাম পাবে।’
হাতিম ফার্নিচার-এর এক্সেকিউটিভ (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মো. ফখরুজ্জামান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্রথম দিকের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে ক্রেতা সমাগম।’
জেএমজি ফার্নিচার-এর সিনিয়র এক্সেকিউটিভ রাসেল মিয়া বলেন, বেচাকেনা মোটামুটি। সামনের দিনগুলোতে কেমন বিক্রি হবে, তা বলতে পারবো না।’
তাসমিম ঝুমকা কালেকশন-এর বিক্রয়কর্মী মো. নাঈম হোসেন বলেন, ‘পরিবারের নিত্যনৈমিত্তিক প্রায় সব স্টিলের পণ্য আমাদের এখানে রয়েছে। সুলভ মূল্যে বিক্রি করছি। কাঠের পান বাটা, পিরিবেলুন আমরা বিক্রি করছি।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-এর পরিচালক মাহমুদুল হাসান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সবসময় মেলার শুরুর দিকে ক্রেতা ও দর্শনার্থী খুব একটা আসে না। এবারও তাই হয়েছে। তবে এখন তাদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। আশা করছি সামনে আরও বাড়বে। এখন পর্যন্ত মেলার সামগ্রিক বিষয়ে আমরা সন্তুষ্ট।’
উল্লেখ্য, এবারের ২৮তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা পুর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে তৃতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে।