২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



লাইফ স্টাইল
প্রিন্ট

শীতে শ্বাসকষ্ট বাড়লে কী করবেন

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১২:১২ পিএম
শীতে শ্বাসকষ্ট বাড়লে কী করবেন


শীত এলে  শিশু থেকে সব বয়সি মানুষ এই সময়ে ঠান্ডা-শর্দিতে ভোগেন। অনেকের দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। শিশু থেকে বয়স্ক সবাই অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভোগেন। 

বাংলায় প্রচলিত হাঁপানি রোগই অ্যাজমা। এটি শ্বাসনালির একটি দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক প্রদাহজনিত সমস্যা। অ্যাজমার কারণে শ্বাসনালিতে বিভিন্ন কোষ বিশেষত ইয়োসিনোফিল ও অন্যান্য কোষের উপাদান জমা হয় ও শ্বাসনালিকে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। পরিবেশের সাধারণ বস্তুগুলোর প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয় বলে অ্যাজমা রোগীর শ্বাসনালির পথও সংকীর্ণ হয়। তখন রোগী শ্বাসকষ্ট, শুকনা কাশি, বুক জ্যাম হওয়া, বুকে বাঁশির মতো শব্দ ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে থাকে।

অ্যাজমার কারণ এখনও অজানা।  কিছু উপাদান অ্যাজমা রোগের উৎপত্তি, আক্রমণ, স্থায়িত্বকে বেশ প্রভাবিত করে, যাদের বলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উপাদান। এসব কারণ বংশগত ও পরিবেশগত, এটা দু’ধরনের হয়।

 অ্যাজমা রোগের লক্ষণ। যেমন,

* অ্যাজমা হলে রোগীর শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে শ্বাসকষ্ট হয়।

* বুকে চাপ অনুভূত হয়।

* কাশি থাকে, বুকে বাঁশির মতো শব্দ হয় ইত্যাদি।

এ লক্ষণগুলো সব রোগীর ক্ষেত্রে একইভাবে থাকে না। কারোর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বেশি হয়, কারোর বুকে চাপ লাগা বেশি হয়। আবার অনেকের শুধু শুকনা কাশি হয়। নিচের লক্ষণগুলো কারোর থাকলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসক দেখানো উচিত।  

যেমন,

* রোগীর বুকে বাঁশির মতো শব্দ।

* রাতে তীব্র কাশি থাকা।

* ব্যায়ামের পর কাশি বা শ্বাসকষ্ট।

* বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন বা উত্তেজকের সংস্পর্শে কাশি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে।

* রোগীর কখনও ঠাণ্ডা লাগলে এবং তা ভালো হতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগলে।

* অ্যাজমার ওষুধে রোগীর লক্ষণ ভালো হয়ে গেলে ইত্যাদি।

অ্যাজমার চিকিৎসা : ওষুধবিহীন ও ওষুধ ব্যবহার করে, এ দু’ধরনের অ্যাজমার চিকিৎসা রয়েছে। ওষুধবিহীন চিকিৎসার ক্ষেত্রে সতর্কতাই মূল উপায়।

ওষুধবিহীন চিকিৎসা

* অ্যাজমার প্রধান কারণ অ্যালার্জি।  কোনো জিনিসে বা খাদ্যে কারও অ্যালার্জি হয়, তা জেনে যথাসম্ভব পরিহার করা উচিত।

* ধূমপান পরিহার।

* অ্যালার্জেন নয়, অথচ শ্বাসকষ্ট বাড়ায় এমন জিনিস পরিহার।

* ধুলাবালি, ময়লা, গন্ধ ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।

* যথাসম্ভব মানসিক চাপ কমানো।

* ঘুমের ওষুধ, তীব্র ব্যথানাশক ওষুধ পরিহার করা।

ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা : ওষুধের মাধ্যমে অ্যাজমা নির্মূল করা যায় না, নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অ্যাজমার ওষুধ দু’ধরনের- উপশমকারী ও প্রতিরোধককারী। সালবিউটামলজাতীয় ওষুধ উপশমকারী ওষুধ, যা তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসনালির ছিদ্রপথকে প্রসারিত করে শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা কমিয়ে দেয়। তবে এর কার্যকাল খুবই কম। ইনহেল স্টেরয়েড, ক্রোমোগ্লাইকেট, মন্টিলুকাস্ট ইত্যাদি হল প্রতিরোধক ওষুধ, যা ধীরে ধীরে কাজ করে।


অ্যাজমার এসব ওষুধ নানাভাবে প্রয়োগ করা যায়। যেমন,

ইনহেলার পদ্ধতি : এটি সবচেয়ে উপকারী এবং আধুনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ওষুধ নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসনালিতে কাজ করে।

ট্যাবলেট অথবা সিরাপ : এ পদ্ধতিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি। কারণ অধিক মাত্রার ওষুধ রোগীর রক্তে প্রবেশ করে।

নেবুলাইজার : তীব্র অ্যাজমার আক্রমণে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

ইনজেকশন : অ্যাজমার মারাত্মক আক্রমণে স্টেরয়েড ইনজেকশন শিরায় দেয়া হয়।

অ্যাজমা প্রতিরোধে কী করবেন 

* সব রকমের ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীর শোবার ঘরটি সব সময় শুষ্ক, ধুলা ও মাইটমুক্ত হতে হবে।

* ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে সে ব্যবস্থা করুন। রাতে ঘুমানোর সময় পর্যাপ্ত উষ্ণতায় থাকুন।

* সকালে প্রস্রাব-পায়খানার সময় মুখে কাপড় বা মাস্ক ব্যবহার করুন।

* সকালে ও রাতে চলাফেরার সময় নাকে কাপড় বা মাস্ক ব্যবহার করা।

* দিনে বা রাতে কুয়াশায় চলাফেরার সময় নাক ঢেকে রাখুন (গায়ে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় থাকলেও)।

* ঠাণ্ডা বাতাস, ঠাণ্ডা পানি ও ঠাণ্ডা খাবার এড়িয়ে চলুন।

* স্যাঁতসেঁতে বা ঘিঞ্জি পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা পরিবেশ নয়।

* পুরনো জামাকাপড় ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করুন।

* ডাস্ট মাইট কমানোর জন্য ব্যবহৃত বালিশ, তোশক, ম্যাট্রেস ইত্যাদির ধুলাবালি নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং রোদে দিন।

* মশার কয়েল বা স্প্রে, চুলার আগুনের ধোঁয়া থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

* হাত-মুখ নিয়মিত ধৌত করুন। কারোর সঙ্গে করমর্দন করলেও হাত ধুয়ে ফেলুন।



আরো পড়ুন