২৫ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার



যে কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরে আয় কমেছে

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ১৬ অক্টোবর, ২০২৩, ০১:১০ পিএম
যে কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরে আয় কমেছে


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য আমদানি আয় ৫০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আমদানিবাণিজ্যে ধীরগতির কারণে সরকারের রাজস্ব আহরণও কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত সব ধরনের বৈধ পণ্য আনার সুযোগ না থাকায় আমদানিতে ব্যবসায়ীদের অনীহা তৈরি হয়েছে। ফলে ক্রমাগত কমছে রাজস্বও। 

তবে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পণ্য পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত বর্তমান মহাসড়কটি চারলেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার কাজ চলছে। প্রায় ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করবে। মহাসড়কটি চালু হলে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যও নেওয়া হচ্ছে ৮০ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প।

সংশ্লিষ্ট-সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তুলনামূলক কম খরচে পণ্য আমদানি করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও লাভবান হতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্য ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা হয়ে সরবরাহ হতো উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে। তবে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ত্রিপুরার সঙ্গে অন্য রাজ্যগুলোর সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নিজ দেশ থেকেই পণ্য সংগ্রহ করছেন তারা। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক ও তুলাসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। যা আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।

বন্দরের ব্যবসায়ীদের মতে, ভারতে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর খুব বেশি সুযোগ না থাকলেও পণ্য আমদানির মাধ্যমে আখাউড়া স্থলবন্দরটিকে চাঙা করা যেতে পারে। তবে বর্তমানে যেসব পণ্য আমদানির অনুমদোন রয়েছে, তার অধিকাংশেরই চাহিদ কম। এছাড়া এসব পণ্য ত্রিপুরার বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়। ফলে আমদানি খরচ মিটিয়ে ভালো মুনাফা করা যায় না। এছাড়া বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় পণ্য ছাড়করণে বিলম্ব হয়। এতে আমদানিকারকদের গুনতে হয় অতিরিক্ত মাশুল। এতে খরচও বেড়ে যায়।

বর্তমানে গবাদি পশু, মাছের পোনা, রাসায়নিক সার, ভাঙা কাঁচ, ফ্লাইঅ্যাশ, মার্বেল চিপস, আগরবাতি, জিরা ও সাতকড়াসহ অর্ধশতাধিক পণ্য আমদানির অনুমতি আছে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। যার বেশিরভাগেরই চাহিদা কম। আর ত্রিপুরার বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়।  চলতি বছরের মে মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিদর্শনে এলে ব্যবসায়ীরা তাদের কয়েকটি পণ্য আমদানির অনুমতি পেতে লিখিত আবেদন জানান। সেই আবেদনের বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে আখাউড়া স্থলবন্দরে একটি ট্রাকইয়ার্ড, একটি ওয়্যারহাউজ ও একটি ওয়েট স্কেল এবং ছোট্ট একটি অফিস ভবন রয়েছে। তবে আমাদিন বাণিজ্য পুরোদমে চালু করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং শুল্ক স্টেশনে আমদানি পণ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পণ্য আমদানিতে ধীরগতির প্রধান কারণ হলো ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতো আমদানির সুযোগ না থাকা। আমদানি বাণিজ্যে গতি আনতে হলে বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি সব ধরনের বৈধ পণ্য আমদানির সুযোগ দিতে হবে। যার মাধ্যমে যখন বাজারে যে পণ্যের চাহিদা থাকবে, সেই পণ্য আমদানি করে মুনাফা করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এতে সরকারও রাজস্ব পাবে। অন্যথায় ব্যবসায়ীদের আমদানি বাণিজ্যে অনীহা কাটবে না।’

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. কামরুল পারভেজ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যে কয়েকটি পণ্য আমদানির অনুমোদন চেয়েছেন, সেগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণও কমছে। তবে বন্দরের রাজস্ব বাড়াতে আমরা সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমদানি পণ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এখন যেসব পণ্য আমদানি হচ্ছে, সেগুলো পরীক্ষার জন্য তেমন কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন পড়ছে না।’

আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। ওই প্রকল্পের আওতায় নতুন আরেকটি ওয়্যারহাউজ, দুটি ওয়েট স্কেল, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড ও অফিস ভবন নির্মিত হবে। এছাড়া চারলেনের জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে। এর মাধ্যমে পণ্য পরিবহন আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন