বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। শ্রোতারা তাকে ভালোবেসে গানের পাখি বলেও ডাকেন। সুরেলা কণ্ঠের মায়ায় তিনি ডুবিয়ে রাখেন শ্রোতাদের। তার গান যুগ যুগ ধরে দেশের মানুষের মনের গহিনে জায়গা করে আছে। দেশাত্মবোধক, আধুনিক কিংবা চলচ্চিত্রের গান- সব ঘরানার গানেই সাবিনা ইয়াসমিনের দাপুটে বিচরণ। উপমহাদেশের এক জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে তার খ্যাতি। তার কণ্ঠে ঠাঁই পেয়ে কালজয়ী হয়েছে অসংখ্য গান।
আজ সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তিনি। সেখানেই পরিবারের সঙ্গে থাকছেন। দেশে ফিরবেন আরও এক মাস পর। সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে তিনি বলেন, ‘জন্মদিনে এত এত মানুষের ভালোবাসা পাই, যেন মনটা আনন্দে ভরে থাকে। আমি আজীবন গান করতে চেয়েছি, শ্রোতাদের মন ভরাতে চেয়েছি। কতটা পারলাম জানি না। তবে যখন ভালোবাসা পাই, তখন একটা তৃপ্তি কাজ করে। সবার কাছে দোয়া চাই, যেন সুস্থ থাকি। আরও অনেক গান যেন উপহার দিতে পারি।’
সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৫৪ সালের এই দিনে সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম লুৎফর রহমান ও মা বেগম মৌলুদা খাতুন। সাবিনা ইয়াসমীনরা পাঁচ বোনের মধ্যে চারজনই গান করেছেন। তারা হলেন- ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন ও সাবিনা ইয়াসমিন। দাম্পত্য জীবনে সাবিনা ইয়াসমিন এক কন্যা ফাইরুজ ইয়াসমিন ও এক ছেলে শ্রাবণের জননী।
১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায় আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
১৯৭১ সালে নঈম গহরের লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম প্রেরণা জুগিয়েছিল। তার গাওয়া অসংখ্য গান কালের সীমানা জয় করেছে। সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া গানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ‘কতো সাধনায় এমন ভাগ্য মেলে’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘তুমি বড় ভাগ্যবতী’, ‘মনেরই রঙে রাঙাবো’, ‘একবার যেতে দে না’, ‘ও আমার রসিয়া বন্ধু রে’, ‘এই পৃথিবীর পরে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’, ‘আমার হৃদয়ের আয়না’, ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘আমি রজনিগন্ধা ফুলের মতো’, ‘বাবা বলে গেলো’, ‘একি সোনার আলোয়’, ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না’ ইত্যাদি কালজয়ী গান সাবিনা ইয়াসমীনেরই গাওয়া।
১৯৭৫ সালে ‘সুজন সখী’ সিনেমায় গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি আরও ১৩ বার অর্থাৎ মোট ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেন, যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ইতিহাসে রেকর্ড।
সংগীতে অবদানের জন্য বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী বহু পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে গানের জন্য ভারত থেকে ‘ডক্টরেট’, ১৯৯১ সালে উত্তমকুমার পুরস্কার, ছয়বার বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা রয়েছে তার অর্জনের খাতায়।
ঢাকা বিজনেস/এন