১৮ মে ২০২৪, শনিবার



সুন্দরবনে ২ মাস কাঁকড়া ধরা নিষেধ

জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট || ০৫ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:৩১ পিএম
সুন্দরবনে ২ মাস কাঁকড়া ধরা নিষেধ


সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরনের কাঁকড়া ধরা দুই মাস নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরো সুন্দরবনে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

সুন্দরবন বিভাগ জানায়, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রপ্তানিপণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া জন্ম নেয়। মা কাঁকড়া রক্ষার জন্যই প্রতি বছরের এ সময়ে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ। 

এদিকে, কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলাসহ সুন্দরবন নিকটস্থ এলাকা থেকে কয়েক কোটি টাকার বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়া রপ্তানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। বিদেশে রপ্তানি করা কাঁকড়ার ৯৯ শতাংশ সুন্দরবন থেকে ধরা হয়ে থাকে। জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে কাঁকড়া রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ এ সময় বেকার হয়ে পড়ে। 

উল্লেখ্য ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে কাঁকড়া রপ্তানিতে আয় দাঁড়ায় ১৪৬ মিলিয়ন ডলারে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এর আয় পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেড়ে য়ায়। কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার সুন্দরবন।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কাঁকড়া জেলে নিমাই চন্দ্র বালা বলেন, ‌‘আমার প্রধান পেশা সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া ধরা। বছরে এই দুই মাস আমি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করি। দুই মাসেন জন্য অন্য পেশায়ও যুক্ত হতে পারি না।’


বছরে দুইমাস বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়ে মংলার জয়মনি এলাকার কাঁকড়া জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীদের প্রণোদনা দেয় কিন্তু আমাদের জন্য কিছু নাই।’ 

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ‘কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মুখে বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাঁকড়া গভীর সাগরের দিকে ছোটে। তা-ছাড়া এই সময় নদীর পানি থেকে সাগরের পানি গরম এবং নদীর পানির থেকে সাগরের পানির লবণাক্ততা বেশি থাকে। এসব কারণেও নদী খাল থেকে কাঁকড়া সাগরে ছুটে যায়। কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের ধরতে না পারে সেজন্য কাঁকড়ার অভায়ারণ্য সুন্দরনে মা কাঁকড়া রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন ব্যিভাগ।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া মা কাঁকড়ার যখন ডিম হয় তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। তারা ক্ষুধার্ত থাকে। তাদের সামনে যে খাবার দেওয়া হয় তারা দ্রুত তা খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। এর ফলে প্রজনন মৌমুমে খুব সহজেই জেলেরা কাঁকড়া শিকার করতে পারে। যদি এই সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয় তাহলে পরবর্তী বছরে অধিক হারে কাঁকড়া উৎপাদন ও বিদেশে অধিক পরিমাণ রপ্তানি করা সম্ভব হয়।’

পূর্ব-সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজননের মৌসুম হওয়ায় এই সময় কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। আর এই নিষিদ্ধ বহাল থাকে শুধু সুন্দরবন এলাকায়। তাই সুন্দরবন বিভাগ এটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন