দেশের কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। ঢাকার মঞ্চনাটক আন্দোলনের পথিকৃৎ তিনি। দীর্ঘ এই জীবনে একত্রে মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল এই নক্ষত্রের আজ ৮৩তম জন্মদিন। ১৯৪১ সালের ৯ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিল্পকলায় অবদানের জন্য সরকার তাকে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
রামেন্দু মজুমদার শিক্ষাজীবনেই থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরে নাট্য আন্দোলন বেগবান করার পথে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নাট্য সংগঠন ‘থিয়েটার’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। চার দশকের বেশি সময় ধরে নাট্যবিষয়ক পত্রিকা ‘থিয়েটার’ সম্পাদনা করছেন তিনি।
রামেন্দু মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পাস করে শিক্ষকতাকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। নোয়াখালীর চৌমুহনী কলেজে মাত্র ৩ বছর শিক্ষকতা করে ইস্তফা দেন। পেশা পরিবর্তন করে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে বিজ্ঞাপনশিল্পে যোগ দেন।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। পাশাপাশি বঙ্গন্ধুর বক্তৃতা, বিবৃতির একটি ইংরেজি সংকলন সম্পাদনা করে দিল্লি থেকে প্রকাশ করেন। ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে বিটপি অ্যাডভার্টাইজিংয়ে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাডভার্টাইজিং ফার্ম ‘এক্সপ্রেশানস’, যেখানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
বেতার ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করছেন যথাক্রমে ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সাল থেকে। এ দুটি মাধ্যমে দীর্ঘদিন সংবাদ পাঠ করেছেন। মঞ্চে অভিনয় করছেন ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। বাংলাদেশের নবনাট্য চর্চা ও আন্দোলনে রামেন্দু মজুমদার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
‘থিয়েটার’ নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ‘থিয়েটার’ পত্রিকার সম্পাদক, ‘আবদুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুল’-এর অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি হিসেবে তার সংযুক্তি বাংলাদেশের নাটক ও সংস্কৃতি চর্চা বেগবান করেছে।
বাংলাদেশের নাটক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে রামেন্দু মজুমদার পালন করছেন অগ্রণী ভূমিকা। তিনি ১৯৮২ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট’ (আইটিআই)-এর বাংলাদেশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ আইটিআই কেন্দ্রকে একটা মর্যাদার আসনে পৌঁছাতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।
তার মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭। তিনি বিভিন্ন সম্মাননা ও পদক পাওয়া ছাড়াও ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেছে। রামেন্দু মজুমদার দ্বিতীয় এশিয়ান হিসেবে বিশ্বনাট্য সভা ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছেন অনন্য গৌরব।
দেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার রামেন্দু মজুমদারের স্ত্রী। অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার তাদের একমাত্র মেয়ে।
ঢাকা বিজনেস/এন/