দিনকে দিন সবজির দাম নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। রোজার ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম প্রকারভেদে ছিল ৩০-৩৫ টাকা, এখন দাম বেড়ে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে আলুরও। এছাড়া, এক সময় যে কচুর লতি মানুষ খেতোই না, এখন সেই সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। শনিবার (৬ মে) রাজধানীর কাওরানবাজার, গুলশান-১ কাঁচাবাজার, হাতিরঝিলপার বাজার, হাতিরপুল কাঁচবাজার, কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। ঈদের আগেও যেমন চড়া দামে সবজি বিক্রি হয়েছে, এখনো তাই হচ্ছে। কিছু কিছু সবজির দাম অতিরিক্ত বেড়ে। এদিকে, সবজি বিক্রেতারা বলছেন, সবজির বাজার সবসময় ওঠানামা করে। এছাড়া বৃষ্টি কম হওয়ায় এবার সবজির উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। যে কারণে বাজারে ঈদ পরবর্তী সবজির সরবরাহ কমে গেছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি সবজি কেজিপ্রতি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রতি কেজি পটল ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৯০ টাকা, শসা ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, লম্বা ও গোল বেগুন ৬০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, উসতা ৫৫ টাকা, ঝিংগা ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে আরও জানা গেছে, প্রতিকেজি লাল আলু ৫০ টাকা এবং সাদা আলু ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ঈদের আগেও ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে লাল ও সাদা আলু বিক্রি হয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। একই পেঁয়াজ ঈদের আগে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, আলুর সিজন শেষ হয়ে যাওয়ায় ও কোল্ড স্টরেজে স্টোক করায় বাজারে আলুর সরবরাহ কমে গিয়েছে। ফলে দাম বেড়েছে। এছাড়া, বর্তমানে সব ধরনের পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের দরে। শুধু দেশীয় বিভিন্ন পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতার।
একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করেন সোলায়মান। কাওরানবাজারে সবজি কিনতে এসেছেন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সব সবজিরই দাম বাড়তি। খেতে হলে কিনতে হয়। দাম বাড়তি হলেও কিছু করার নেই।
কারওয়ানবাজারে ফার্মের মুরগি প্রতিকেজি ২১০ টাকা ও সোনালি কক ৩২০ টাকায় বিক্রি হলেও রাজধানীর অন্যান্য বাজারে বয়লার মুরগি ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় এবং সোনালি কক ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, খাসির মাংশ ১ হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংশ ১ হাজার টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে প্রতিকেজি।’
গুলশান-১-এর মুরগি ব্যবসায়ী মো. সোয়েল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কাওরানবাজার থেকে গুলশানের বাজারে মুরগির ক্যারিং খরচ বেশি। যে কারণে আমরা কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করি।’
রাজধানীর বাজারগুলোতে আগের মতোই বাড়তি দামে বিভিন্ন প্রকারের মাছ বিক্রি হচ্ছে। রুই ২৮০ টাকা, নদীর টেংড়া ৬০০ টাকা, চিংড়ি প্রকার ভেদে ৫৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, পাবদা ৫৫০ টাকা, হাইব্রিড শিং ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, ইলিশ ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাওরানবাজারে এক আলুর আড়তের তত্ত্বাবধানে থাকা মো. হানিফ খন্দকার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলু মজুদ করে রাখা হচ্ছে। সরবরাহ কমে গেছে। আমাদের বাড়তি দামে আলু কিনতে হচ্ছে। যে কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যার প্রভাব বাজারে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহীর লাল আলু ২৬ টাকা ও সাদা আলু ২৭ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ২৬ টাকা ও সাদা আলু ২৭ টাকা, বিক্রমপুরের লাল আলু ২৬ টাকা ও সাদা আলু ২৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করছি। এখন আলুর সিজন না। যে কারণেও আলুর দাম বেড়েছে।’
পেঁয়াজের আড়তদার হাবিবুর ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের অফ সিজন। পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। আমাদেরই বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। প্রতিকেজি ৫৬ টাকা দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি। আগামীতে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/