২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

সরকারি দামে মিলছে না এলপি গ্যাস

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ০৩ জানুয়ারী, ২০২৩, ১০:৩১ পিএম
সরকারি  দামে মিলছে না এলপি গ্যাস


গ্রাহকদের কাছে সোমবার (০২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হওয়া সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি)। আগের দামেই এলপি গ্যাস বিক্রি করছেন বৃহৎ, মাঝারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন,  এলপি গ্যাসের দাম  কমানো অযৌক্তিক। ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি কিনতে না পেরে গ্রাহকদের মনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।   

বিইআরসি পক্ষ থেকে প্রতিকেজি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০২ টাকা ৭০ পয়সা। যা আগের মাসের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। প্রতিকেজি এলপিজির দাম ডিসেম্বর মাসের চেয়ে ৫ টাকা ৩৯ পয়সা কমানো হয়েছে। নতুন এই দর সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর করা বলা হয়েছে। চলতি  মাসে ১২ কেজি ওজনের একটি এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হবে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৩২ টাকায়। গতমাসে  ছিল ১২৯৭ টাকা ছিল। অর্থাৎ ১২ কেজির সিলিন্ডারে দাম কমেছে ৬৫ টাকা। এলপিজি আমদানির সঙ্গে যুক্ত ১৬টি কোম্পানির দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ধরা হয়েছে ১০৫ টাকা ৬৩ পয়সা। যদিও আগের মাসে এই মান ১০৫ টাকা ২২ পয়সা ধরা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত এই মূল্যহার অনুযায়ী এলপিজির ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন মূল্য অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে রেটিকুলেটেড গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে প্রতিকেজি ৯৯ টাকা ৪৬ পয়সা, যা আগের মাসে ১০৪ টাকা ৮৫ পয়সা ছিল। যানবাহনে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দাম ধরা হয়েছে প্রতিলিটার ৫৭ টাকা ৪১ পয়সা, যা আগের মাসে ৬০ টাকা ৪১ পয়সা ছিল।

রাজধানীর মিরপুর, শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করছেন না। তারা আগের দামই নিচ্ছেন। অথচ গ্যাসের দাম বাড়ালে তখন তারা কে কার আগে বর্ধিত দামে বিক্রি করবেন, সেই প্রতিযোগিতায় নামেন।

রাজধানীর মিরপুর-১০-এর ইব্রাহিম ট্রেড লিংকের স্বত্বাধিকারী রফিকুল আহমেদ পারভেজ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমাদের মুনাফা থাকবে না। তাই আগের দামেই আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।’

রাজধানীর শাহ্জাদপুরের হৃদয় এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার বলেন, ‘১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির কাছ থেকে আমাদের কেনা পড়ে ১ হাজার ২৬০ থেকে ১ হাজার ২৭০ টাকা। এরপর গ্যাসের ক্যারিং খরচ, শ্রমিকের বেতন, দোকান ভাড়া রয়েছে। সব মিলিয়ে একটি ১২ কেজি এলপি গ্যাস সিল্ডিারে আমাদের ১ হাজার ৩০০ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ে। আমরা কিভাবে ১ হাজার ২৩২ টাকায় এই গ্যাস বিক্রি করবো? প্রতি ১২ কেজি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার আমরা পাইকারিভাবে ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা বিক্রি করে থাকি কোম্পানি অনুযায়ী। আর খুচরা পর্যায়ে একটি ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার  ১ হাজার ৩৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকি।’

হৃদয় এন্টারপ্রাইজের  আরও বলেন, ‘কোম্পানিগুলোও সরকার নির্ধারিত দাম অনুসরণ করে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে গ্যাস বিক্রি করছে না। তারা আগের দামেই গ্যাস বিক্রি করছে। তাহলে ডিস্ট্রিবিউটররা কিভাবে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে জানুয়ারি মাসে সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর-১-এ খুচরা এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ব্যবসায়ের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। জানুয়ারি মাসে সরকার নির্ধারিত দামে গ্রাকদের কাছে আমরা গ্যাস বিক্রি করতে পারছি না। ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকেও আমরা সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী কোনো ছাড় পাচ্ছি না। ফলে আগের দামে গ্যাস বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে এই গ্যাস সিল্ডিারগুলো বিক্রি হয়ে গেলে ডিস্ট্রিবিউটররা যদি সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী আমাদের কাছে বিক্রি করেন, তাহলে আমরাও বিক্রি করতে পারবো।’

গ্রাহকদের বরাদ দিয়ে  এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি বেশিরভাগ গ্রাহককে হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকি। দাম নিয়ে কিছু কিছু গ্রাহক আমার সঙ্গে রাগারাগি করছেন। তারা বলছেন, সরকার দাম কমিয়েছে। আমি কেন বেশি দামে বিক্রি করছি? আমি তাদের বলেছি, এখন আগের দামেই গ্যাস নিতে হবে। কারণ ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে আমরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে গ্যাস সিল্ডিার নিয়ে এসেছি। তারাও অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।’

বসুন্ধরা গ্যাসের ডিভিশনাল সেলস ম্যানেজার (ঢাকা দক্ষিণ) রোকনুজ্জামান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বিইআরসি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা বা সমন্বয় না করেই প্রতি কেজি এলপি গ্যাস গ্রাহক পর্যায়ে ১০২ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। এটা একদমই অযৌক্তিক হয়েছে। কোম্পানি, ডিস্ট্রিবিউর, খুচরা ব্যবসায়ী; কেউই এই দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করতে পারবে না।’       

বিইআরসি’র পরিচালক (গ্যাস) প্রকৌশলী মহম্মদ আলী বিশ্বাস ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সৌদি আরামকো এলপিজির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেনের দাম কমায় ও ডলারের সঙ্গে সমন্বয় করে জানুয়ারি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি মাসেই আমরা এলপিজি’র দাম নির্ধারণ করে থাকি। হঠাৎ করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়নি।’

 মহম্মদ আলী বিশ্বাস আরও বলেন, ‘আমরা যখন এই দাম নির্ধারণ করি, তখন ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি ছিলেন, তাদের প্রতিনিধি এই দাম নির্ধারণে সিগনেচার করেছেন। কোনো ব্যবসায়ী যদি গ্রাহকদের কাছ থেকে আগের দামে গ্যাস বিক্রি করে থাকেন, তবে সঠিক প্রমাণসহ আমাদের কাছে জমা দিলে সেই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার যখন এলপি গ্যাসের দাম বাড়ায়, তখন তো ব্যবসায়ীরা কিছু বলেন না। তারা আগের কম দামে কেনা গ্যাস তখন কম দামে বিক্রি করেন না। তখনো দ্রুত বর্ধিত দামেই গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন।’ৎ

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন